সৌরভ দেব, জলপাইগুড়ি : বাসিন্দাদের আশঙ্কাই সত্যি হল। কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি রাস্তার পিচের চাদর উঠে গেল মাত্র এক বছরের মধ্যে।
খড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সারদাপল্লি এলাকায় জুবিলি পার্ক থেকে নয় নম্বর স্পার পর্যন্ত এই রাস্তাটি তৈরির সময় থেকেই বাসিন্দারা নিম্নমানের কাজের অভিযোগ তুলেছিলেন। একসময় ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁরা কাজ বন্ধ করে দেন। পরে কাজ চালু হয়। এবার পিচের চাদর উঠে যাওয়ায় বাসিন্দারা কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন রাজ্য গ্রামীণ উন্নয়ন দপ্তরকে।
আরআইডিএফের অর্থবরাদ্দে তৈরি হয়েছিল রাস্তাটি। বাসিন্দাদের অভিযোগ ছিল, রাস্তা তৈরির সময় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার কাজ দেখতে এলাকায় আসেননি। বর্তমানে রাস্তার বেহাল দশায় ফের ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।
জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নুরজাহান বেগম বলেছেন, ‘রাস্তার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানাব।’ তাঁর সংযোজন, ‘এখন নিয়মের মধ্যেই থাকে, যে এজেন্সি রাস্তা তৈরি করবে তারা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রাস্তা ভেঙে গেলে তা মেরামতের দায়িত্ব নেবে। এক্ষেত্রে কোন এজেন্সি কাজ করেছিল সেটাও দেখা হবে।’
বহুদিন ধরে এই রাস্তা তৈরির দাবি জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এর জন্য আন্দোলনও হয়েছে। শেষমেশ স্থানীয়দের দাবি মান্যতা পায়। ২০২৩ সালে এপ্রিল মাসে কাজের শিলান্যাস করেন জলপাইগুড়ির বিধায়ক প্রদীপকুমার বর্মা। শিলান্যাসের প্রায় এক বছরের মাথায় যখন রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হয়, তখনই শুরু হয় সমস্যা। অভিযোগ ওঠে, নিম্নমানের কাজ হচ্ছে। সরব হন বাসিন্দারা।
সেই সময় গ্রামবাসীদের বক্তব্য ছিল, রাস্তায় যে পিচের প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে তা এতটাই পাতলা, কিছুদিনের মধ্যে উঠে যাবে। আশঙ্কাই এবার সত্যি হয়ে গিয়েছে।
প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তাটির জন্য ১ কোটি ১২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। অথচ এক বছরের মধ্যে উঠে গিয়েছে পিচের চাদর। বহু জায়গায় পাথর বেরিয়ে এসেছে। স্থানীয় বাসিন্দা শ্যামল মাঝির কথা, ‘এই রাস্তা এখনও বৃষ্টির জল পায়নি। তাতেই এই অবস্থা। আমার মনে হয় বর্ষার পর এই রাস্তা আর থাকবে না।’ আরেক বাসিন্দা তারা মণ্ডলের অভিযোগ, ‘যখন রাস্তাটা তৈরি হচ্ছিল তখনই প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। কিন্তু কেউই আমাদের কথায় কান দেয়নি।’
রাস্তার অবস্থা নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য দিলীপ মণ্ডলও। তাঁর বক্তব্য, ‘অত্যন্ত নিম্নমানের কাজ হয়েছে। সেই সময় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করার পরেও কোনও ইঞ্জিনিয়ার রাস্তার কাজ দেখতে আসেননি।’ রাস্তাটা যদি ভেঙে যায়, তাহলে ফের আন্দোলনে নামা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। এখন দেখার, সংশ্লিষ্ট দপ্তর কী ব্যবস্থা নেয়।