শুভদীপ শর্মা, ময়নাগুড়ি : শামুকখোলের কল্যাণে আপাতত রক্ষা পেল খান ত্রিশেক গাছ। ময়নাগুড়ি-চালসা জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণে ৪৭০টি গাছ কাটা পড়ার কথা। তার মধ্যে ময়নাগুড়ি শহরে জাতীয় সড়কের পাশে শতাব্দীপ্রাচীন বেশ কয়েকটি গাছে শামুকখোলের বাসা। রাস্তার কাজের জন্য সেই গাছগুলিরও কাটা পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। তবে পরিবেশপ্রেমীদের আন্দোলনের চাপে সিদ্ধান্ত হল, যে গাছগুলিতে শামুকখোলের বাসা, সেই গাছগুলি বাঁচিয়েই জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ করা হবে। সেক্ষেত্রে জাতীয় সড়কের প্রস্থও কমানো হবে। সিদ্ধান্তে খুশি পরিবেশপ্রেমীরা।
সম্প্রতি ময়নাগুড়ি বিডিও অফিস মোড় থেকে, চালসা গোলাই পর্যন্ত ৭১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। এর জন্য জাতীয় সড়কের দু’পাশে প্রচুর সংখ্যক গাছ কাটা পড়বে। তা নিয়ে পরিবেশপ্রেমীরা সরব হয়েছেন। উত্তরবঙ্গ সংবাদেও ধারাবাহিকভাবে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এই সড়কের মাঝে ময়নাগুড়ি নতুন বাজার ও বিডিও অফিসের মাঝের রাস্তায় প্রায় ত্রিশটি বহু প্রাচীন শিরীষ গাছ রয়েছে। সেখানে গত কয়েক বছর ধরে আশ্রয় নিয়েছে শামুকখোলের দল। সেখানেই ডিম ফুটিয়ে বংশবৃদ্ধি করে চলেছে তারা। আশঙ্কা ছিল জাতীয় সড়কের পাশে এই অংশের গাছগুলিকে কাটা হবে নির্বিচারে। ফলে একদিকে যেমন সবুজ নিধন হবে তেমনি বাসা হারাবে শামুকখোলেরা। এরপরই আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নেয় পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের উত্তরবঙ্গের যৌথ মঞ্চ। গাছ না কাটার দাবিতে পোস্টারও পড়ে একাধিক জায়গায়। পিছু হটে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের মাল বাজারের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার কিংশুক শ্যামল বলেন, ‘ওই অংশের বড় গাছগুলো না কেটে সেখানে রাস্তা চওড়া করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
ময়নাগুড়ি বিডিও অফিস মোড় থেকে ময়নাগুড়ি দাড়িভিজা মোড় পর্যন্ত কয়েক কিমি দীর্ঘ রাস্তায় যানজট ময়নাগুড়ি শহরের পুরোনো সমস্যা। সেই সমস্যার সমাধানে সেই রাস্তা ২৬.৬ মিটার চওড়া হওয়ার কথা ছিল। তবে এখন এই গাছগুলোর কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, ময়নাগুড়ি বিডিও অফিসের দিক থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূর থেকে পাওয়ার হাউস মোড় পর্যন্ত জাতীয় সড়কের অংশটা আগের মতোই ২৬.৬ মিটার চওড়া হবে। আর জাতীয় সড়কের বাকি অংশ কোথাও ১০ মিটার আবার কোথাও ১২ মিটার চওড়া হবে। এতেই আর জাতীয় সড়কের পাশে থাকা ওই বড় গাছগুলো কাটার আশঙ্কা থাকছে না। জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ কর্মাধ্যক্ষ মহুয়া গোপ বলেন, ‘পরিবেশ ও গাছ বাঁচিয়ে যতটুক রাস্তা চওড়া করা যায় ঠিক ততটুকুই রাস্তা চওড়া করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের উত্তরবঙ্গের যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক অনির্বাণ মজুমদার জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন। সেইসঙ্গে বলেন, ‘তবে রাস্তার পাশে থাকা বাকি গাছগুলে কাটার সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আগামীতে বৃহত্তর আন্দোলনে নামব আমরা।’