পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি: হেরিটেজ কমিশন থেকে জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) শহরের উপর হেরিটেজ রোড ম্যাপ তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল ২০১৭ সালে। মাঝখানে সাত বছর কেটে গেলেও পুরসভা বা প্রশাসন থেকে এই বিষয়ে কোনও উদ্যোগ নেয়নি। এবার জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন ও পুলিশের উদ্যোগে ২২ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে জলপাইগুড়ি উৎসব। উৎসবের অঙ্গ হিসেবেই জেলা প্রশাসন ও জলপাইগুড়ি পুরসভা শুক্রবার শহরে আয়োজন করেছিল ‘হেরিটেজ ওয়াক’-এর। শহরের উল্লেখযোগ্য হেরিটেজ সম্পত্তিগুলি সরেজমিনে পরিদর্শন করে রোড ম্যাপ তৈরির কথা ঘোষণা করা হল। এই জায়গাগুলিকে কেন্দ্র করেই শহরকেন্দ্রিক হেরিটেজ পর্যটন চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে অতিরিক্ত জেলা শাসক (পর্যটন) প্রিয়দির্শনী ভট্টাচার্য জানান।
এদিন সকালে জলপাইগুড়ি পুরসভার কাছ থেকে হেরিটেজ ওয়াক শুরু হয়। হেরিটেজ ওয়াক লেখা টুপি পরে, হেরিটেজ ছবি দেওয়া ছাতা ও ব্যানার ও ট্যাবলো নিয়ে শহরের হেরিটেজ স্পটগুলি পরিদর্শন করা হয়। নয়াবিস্তর ব্যাপটিস্ট চার্চ থেকে পরিদর্শন শুরু করে প্রধান ডাকঘরের পুরোনো বিল্ডিং, শতাব্দীপ্রাচীন সংবাদপত্র জনমত পত্রিকা কার্যালয়, কোচবিহার মহারাজার নাচঘর বলে পরিচিত আয়রন হাউস, জলপাইগুড়ি টাউন ক্লাব এবং সেন্ট মাইকেল অ্যান্ড অল অ্যাঞ্জেল চার্চে গিয়ে হাঁটা শেষ হয়। প্রতিটি হেরিটেজ সম্পত্তি কী অবস্থায় রয়েছে, কীভাবে সংরক্ষণ করা যেতে পারে তা খতিয়ে দেখা হয়। হেরিটেজ স্থাপত্যগুলির ইতিহাস পর্যটন ব্যবসায়ী সব্যসাচী রায় ও সদর মহকুমা শাসক তমোজিৎ চক্রবর্তী তুলে ধরেন।
জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারপার্সন পাপিয়া পাল বলেন, ‘পুরোনো পুর ভবন অনেক স্মৃতি বহন করছে। প্রশাসনের মতো আমরাও শহরের হেরিটেজ সম্পত্তি সংরক্ষণে উদ্যোগী ও দায়িত্বশীল। খুব শীঘ্রই পুর এলাকার হেরিটেজ দুলালদিঘির সংস্কার শুরু হবে।’
সেন্ট মাইকেল অ্যান্ড অল অ্যাঞ্জেল চার্চের ফাদার রেভারেন্ড ডেভিড হাঁসদা জানান, জেলার জন্মের এক বছর আগে এই চার্চ স্থাপিত হয়েছিল। জেলার চা-করদের ইতিহাস, চা চাষের গোড়াপত্তনের ইতিহাস লুকিয়ে রয়েছে তাদের ইউরোপিয়ান িট প্ল্যান্টার্সদের সঙ্গে। এগুলিকে নিয়ে পর্যটন সার্কিট গড়ে তোলা যেতে পারে।
এদিন জেলা প্রশাসনের তরফে দুজন প্রশিক্ষিত ট্যুর গাইডকে নিয়ে আসা হয়। স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী সব্যসাচী রায় মনে করেন, ‘কোচবিহার শহরের হেরিটেজ সম্পত্তিকে ঘিরে অনেক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তেমনই জলপাইগুড়ি শহর তথা জেলার হেরিটেজ সাইটগুলিক সংরক্ষণ ও হেরিটেজ পর্যটন চালু করলে পর্যটকরা আসবেন।’
জলপাইগুড়ি সদর মহকুমা শাসক তমোজিৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘জলপাইগুড়ি ইতিহাসসমৃদ্ধ। ইংরেজ শাসক থেকে রাজা, নবাব, জমিদারদের তৈরি বিভিন্ন স্থাপত্য শহরের এক-একটি অলংকার। প্রশাসন দায়বদ্ধ এই সম্পত্তিগুলির সংরক্ষণে।’
এদিন সাধারণ মানুষ থেকে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী, সরকারি কর্মী, পর্যটন ব্যবসায়ীরা প্রায় ৭ কিমি হেরিটেজ ওয়াকে পা মেলান। পরে অতিরিক্ত জেলা শাসক বলেন, ‘আমরা চাই সমস্ত হেরিটেজ সম্পত্তির ওপর একটি তথ্যসমৃদ্ধ ডকুমেন্ট তৈরি করতে, যাতে শহর ও শহরের বাইরের মানুষকে এই হেরিটেজ স্থাপত্যগুলিতে ঘোরানোর ব্যবস্থা করা যায়। যাঁরা এই সম্পত্তিগুলির মালিক তাঁদের সঙ্গেও কথা বলব। হেরিটেজ কমিশনকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে এগুলির রক্ষণাবেক্ষণে।’