Jalpaiguri | মৃত বলেও ফের ভরতি শিশুকে, যদিও শেষরক্ষা হল না, কাঠগড়ায় জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল   

Jalpaiguri | মৃত বলেও ফের ভরতি শিশুকে, যদিও শেষরক্ষা হল না, কাঠগড়ায় জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল   

শিক্ষা
Spread the love


চ্যাংরাবান্ধা ও জলপাইগুড়ি: …মরিয়া প্রমাণ করিল, সে মরে নাই। রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পের কাদম্বরীর মতো এই ঘটনা ঘটেছে জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে।

প্রসূতির পরিবারকে জানানো হয়েছিল, নবজাতক মারা গিয়েছে। আপনারা এসে মৃতদেহ নিয়ে যান। মৃত্যুর শংসাপত্রও তৈরি করে রেখেছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেইমতো পরিবারের সদস্যরা মৃতদেহ আনতে হাজির হয়েছিলেন হাসপাতালে। কিন্তু তারপরেই যা ঘটল, তা রীতিমতো শিউরে ওঠার মতো। পরিবারের সদস্যরা দেখতে পান, সেই শিশু বেঁচে রয়েছে! এরপরেই তড়িঘড়ি তাকে পুনরায় ভর্তি করে নেওয়া হয় হাসপাতালে। ছিঁড়ে ফেলা হয় মৃত্যুর শংসাপত্র। যদিও শেষরক্ষা হল না। রবিবার সেই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

চ্যাংরাবান্ধা গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৪১ কামাত চ্যাংরাবান্ধা হক মঞ্জিল এলাকার বাসিন্দা রেশমি খাতুন শুক্রবার রাতে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। তারপর দু’দিন ধরে এই নাটকের পর এখন শোকের ছায়া নেমে এসেছে শিশুটির পরিবার তথা এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই শিশুর মৃত্যু হয়েছে, এই অভিযোগ করে, বিচার চেয়ে রবিবার হাসপাতাল চত্বরেই পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছে শিশুর পরিবার। এ প্রসঙ্গে শিশুটির ঠাকুমা সাকিনা বিবি বলেন, ‘গত সোমবার থেকে আমার বৌমা জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে পেটে যন্ত্রণা নিয়ে। শুক্রবার সন্ধ্যায় যন্ত্রণা অত্যধিক হয় এবং হাসপাতালের শয্যাতেই বাচ্চা প্রসব হয়ে যায়। এরপর আমি কর্তব্যরত নার্সকে ডাকি। বিষয়টি বলতেই তিনি বাচ্চা ও বৌমাকে লেবার রুমে নিয়ে যান। লেবার রুমে নিয়ে বাচ্চাকে হিটারের সামনে দেয় আর বৌমাকে বেডে উঠিয়ে দেয়। বৌমাকে চিকিৎসার পরে লেবার রুমের বাইরে বের করে দেয়। কিন্তু বাচ্চাকে দেয়নি। আমি বাচ্চাকে নিতে গেলে নার্স জানায়, ও মারা গিয়েছে, নিয়ে আর কী করবেন? পরদিন সকাল দশটায় এসে বাচ্চার মৃতদেহ নিয়ে যাবেন।’

সেইমতো শনিবার সকাল দশটায় সাকিনারা গিয়েছিলেন হাসপাতালে। ১২টারও পর বাচ্চার দেহ যখন তাঁদের দেওয়া হয়, তাঁরা দেখেন সে তো নড়াচড়া করছে! সাকিনা বলেন, ‘বাচ্চা জীবিত থাকার কথা আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জানাতেই তারা আমার হাতের থেকে বাচ্চার মৃত্যুর শংসাপত্র কেড়ে নেয়। এরপর তারা বাচ্চাকে আমাদের কাছ থেকে নিয়ে নেয় আর বলে আধ ঘণ্টা পরে আসতে।’ এরপর বাচ্চাকে আইসিইউতে রাখে। রেশমির দাবি, রবিবার সকালেও তিনি বাচ্চাকে জীবিতই দেখেছেন। তার একটু পরেই বলা হয় বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে। এবার সত্যি সত্যি।

ঘটনা প্রসঙ্গে জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজের এমএসভিপি ডাঃ কল্যাণ খান বলেন, ‘নবজাতকের মৃত্যু ঘিরে একটা সমস্যা হয়েছে বলে মৌখিকভাবে জানতে পেরেছি। যেটুকু জেনেছি তা হল, অপরিণত শিশু হিসেবে জন্ম নিয়েছিল ওই সদ্যোজাত। তাকে বাঁচানোর সবরকম চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সে মারা যায়। আমি ওই ঘটনার সমস্ত রিপোর্ট চেয়েছি প্রসূতি বিভাগের কাছে।’

কিন্তু এমএসভিপির আশ্বাসে শিশুটির পরিজনদের চোখের জল বাঁধ মানছে না। মৃত শিশুর ঠাকুরদা সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শুক্রবার আমার যে নাতিকে মৃত বলে প্রায় ১৪ ঘণ্টা বিনা চিকিৎসায় ফেলে রেখেছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, শনিবার সেই নাতি কী করে বেঁচে উঠল? আবার রবিবার মারা গেল! সমস্তটাই হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে।’ বলছিলেন, ‘যদি শুক্রবার রাতে নার্সরা ভালোভাবে খেয়াল করতেন, তাহলে ওদেরও নজরে আসত যে শিশুটি বেঁচে রয়েছে। তাহলে চিকিৎসা পেত। আজ হয়তো তার মৃত্যু হত না।’

এদিকে, সন্তান হারিয়ে কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না রেশমি। শিশুটির বাবা আজিমুল হকও দায়ী চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের শাস্তির দাবিতে অনড়। বলছেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে যাতে অন্য কোনও বাবা-মায়ের কোল খালি না হয়, সেজন্য আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আর চিকিৎসকের শাস্তি চাই।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *