অভিষেক ঘোষ, মালবাজার: সোমবার ময়নাগুড়িতে আগুন লাগা বাসটি ছিল এনবিএসটিসি (NBSTC)-র মাল ডিপোর। জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) থেকে ছাড়ার আগেই বাসে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেয়। প্রায় ১৫ মিনিট দেরিতে ছাড়া হয় বাস। অথচ মাল ডিপোয় বাসে রক্ষণাবেক্ষণের তেমন কোনও ব্যবস্থাই নেই। কোনও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার তো দূরের কথা, বাস সারানোর জন্য র্যাম্পও পর্যন্ত নেই। বাইরে থেকে কয়েকজন মিস্ত্রি চুক্তির ভিত্তিতে এনে কাজ চালানো হচ্ছে। এমন অবস্থায় সরকারি বাসের যাত্রীদের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে।
উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর দীপঙ্কর পিপলাই বলেন, উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের ২১টি ডিপো ও চারটি ডিভিশনাল ওয়ার্কশপ আছে। এগুলির দায়িত্বে আছেন একজন সহকারী ইঞ্জিনিয়ার সহ চারজন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্মী। তাঁদের পক্ষে এত বড় দায়িত্ব পালন করা কষ্টকর হলেও তাঁরা সেটা করছেন। বিভিন্ন রুটে আরও বাসের প্রয়োজন, সেটাও পাওয়া যায়নি। বারবার রাজ্য সরকারের কাছে এই বিষয়টি তুলে ধরলেও সমাধান হয়নি। অন্যদিকে, নিয়োগ বন্ধ থাকায় ডিপো ইনচার্জ পদে সিনিয়ার চালকদের পদোন্নতি দিয়ে বসাতে হচ্ছে।
মালবাজার (Mal Bazar) শহরে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের ডিপো চালু হওয়ার পর আজও তৈরি হয়নি র্যাম্প। সংস্থার মেকানিক্যাল বিভাগের কর্মীরাই জানিয়েছেন, বাসের মেরামতির জন্য র্যাম্পের খুবই প্রয়োজন। বাস যেখানে গ্যারাজে দাঁড়িয়ে থাকে সেখানে বাসের নীচে শুয়ে মেরামতির কাজ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আলোর অভাবে সঠিকভাবে দেখা যায় না বাসের নীচের অংশ। সেক্ষেত্রে র্যাম্প থাকলে মাটির থেকে খানিকটা উঁচুতে থাকে বাস। তখন মেরামতির কাজ করতে অনেক সুবিধা হয়। মাল ডিপোয় র্যাম্প তৈরির জন্য উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের কর্তাদের কাছে বহুবার জানানো হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। ফলে বাসের ছোটখাটো কোনও সমস্যা হলেও বাস নিয়ে যেতে হয় জলপাইগুড়ি ডিপো অথবা শিলিগুড়ি ডিপোয়।
মাল ডিপোর গ্যারাজে বাস রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতির কাজে বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে ৫ জন চুক্তিভিত্তিক কর্মী নেওয়া হয়েছে। ডিপোর মেকানিক্যাল ইনচার্জ মন্টু সরকারকে পদোন্নতি দিয়ে ডিপো ইনচার্জ করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মেকানিক্যাল ইনচার্জের পদ শূন্য। অফিসের ফাইলপত্রের কাজ সামলে মন্টুবাবুকেই বাসের টেকনিকাল ত্রুটি পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তিনি নিজেই বাসের নীচে ঢুকে বাসের ইঞ্জিন, যন্ত্রাংশ যাচাই করে দেখেন। মেকানিক্যাল বিভাগের অস্থায়ী কর্মী রেবতীভূষণ বর্মন বাসের রক্ষণাবেক্ষণে নজর রাখেন।
সোমবারের মাল ডিপোর বাসে অগ্নিকাণ্ডের পর সরকারি বাসের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে আশঙ্কিত নিত্যযাত্রীরা। এছাড়াও মাঝেমধ্যেই যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে মাঝপথে বিকল হয়ে যায় বাস। সেক্ষেত্রে শীঘ্রই মাল ডিপোতে প্রয়োজন স্থায়ী মেকানিক্যাল বিভাগের ইনচার্জ। গ্যারাজের শেড আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
ডিপো ইনচার্জ বলেন, অনেকবার র্যাম্প তৈরির আবেদন করা হয়েছে। সেটা না হওয়ায় বাসের ইঞ্জিন যাচাই ও রক্ষণাবেক্ষণে সমস্যা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের কর্মচারী সংগঠনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক দীপেশ দাস অবশ্য বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। কিছুদিন ছুটিতে আছি।’