গয়েরকাটা: বাবা–মায়ের বিয়ে দেখা! কথার কথা মাত্র। এমন বিয়ের সাক্ষী থাকা সহজ বিষয় নয়। রবিবার বানারহাট ব্লকের শালবাড়ি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের নোনাইপাড় কিন্তু এমন অভিজ্ঞতারই সাক্ষী থাকল। জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার ১৫ জোড়া দম্পতি এদিন নববধূ-বরের সাজে খুট্টিমারি বিট অফিস সংলগ্ন এলাকার সারনা শাদি-র মঞ্চে উপস্থিত হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে কারও একটি, কারও বা একাধিক সন্তান। বয়স কারও ২২ তো কারও ৪২। রাজী পারহা সারনা প্রার্থনা সভা ভারত খুট্টিমারি বনবস্তি ইউনিটের আয়োজনে এদিন প্রকৃতি পারাব সারহুল খাদদী পূজা মিলন সমারোহের পাশাপাশি সারনা শাদির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। রবিবার মাতৃ দিবস ছিল। যারা মায়েদের বিয়েতে শামিল হওয়ার সুযোগ পেল, এই অভিজ্ঞতা নিশ্চিতভাবে চিরকালের জন্য তাদের মন–ডায়েরিতে অম্লান হয়ে থাকবে। আয়োজকদের তরফে ফাগু ওরাওঁ বললেন, ‘খুব সুন্দরভাবে এদিনের কর্মসূচি সম্পন্ন হয়েছে। ভবিষ্যতের জন্য প্রত্যেককে শুভেচ্ছা জানাই।’
বাবা–মায়ের বিয়ে দেখা অবশ্য আদিবাসী সমাজের বহু প্রাচীন রীতি। আধুনিকতার দাপটে অনেক কিছুর বদল হলেও এই লোকাচারের বদল হয়নি। গণবিবাহ বা সারনা শাদি আসলে একটি স্বীকৃতির অনুষ্ঠান। দুটি মনের মিল হলেই এই সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে পথ চলতে পারেন। তবে সংসারধর্ম পালন করলেও যে কোনও সামাজিক অনুষ্ঠান সহ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সরাসরি অংশগ্রহণ থেকে তাঁরা বঞ্চিত থাকেন। নিজেদের সন্তানদের বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজনের আগে তাঁদের নিজেদের বিয়ে সেরে নিতে হয়। তবে বিয়ের অনুষ্ঠান মানেই প্রচুর খরচ। অনেকের মধ্যেই মধ্যবয়সে পৌঁছে বিয়ের খরচ জোগানো সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে গণবিবাহের অনুষ্ঠান তাঁদের ক্ষেত্রে আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেয়। এদিন নোনাইপাড়ে গণবিবাহের অনুষ্ঠান তাঁদের কাছে যেন আশীর্বাদ হয়েই দেখা দিয়েছিল। সুখমণি খাড়িয়ার মতো অনেকেই তাই এদিন খুশিতে ডগমগ হয়ে রইলেন। তাঁর কথায়, ‘একসঙ্গে থাকলেও স্বামীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক এতদিন কোনও পূর্ণতা পাচ্ছিল না। এবারে তা পূর্ণতা পেল। আমার দুটি সন্তান রয়েছে। আমাদের সম্পর্ক পূর্ণতা পাওয়ায় তাদের কোনওদিন সামাজিক সমস্যায় পড়তে হবে না।’
এদিন সব ভালোয় ভালোয় মিটে যাওয়ায় শালবাড়ি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নবীন রায়ের মতো অনেকেরই মুখে হাসি। মায়েদের সঙ্গে যারা এদিন এই অভিনব বিয়ের অনুষ্ঠানে শামিল হয়েছিল, সুন্দর হাসি ছিল তাদের মুখেও।