Jalpaiguri | বিশ্বাসের দৃষ্টান্ত জন্মান্ধ যুগলের ‘অমর প্রেম’

Jalpaiguri | বিশ্বাসের দৃষ্টান্ত জন্মান্ধ যুগলের ‘অমর প্রেম’

শিক্ষা
Spread the love


কৌশিক দাস, ক্রান্তি: ‘শেষের কবিতায়’ রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘…তোমারে যা দিয়েছিনু তার/ পেয়েছ নিঃশেষ অধিকার।/ হেথা মোর তিলে তিলে দান,/ করুণ মুহূর্তগুলি গণ্ডূষ ভরিয়া করে পান/হৃদয়-অঞ্জলি হতে মম।…’ এমনই অব্যক্ত প্রেমের পূর্ণ প্রকাশ যেন বিফাই আর বীণা। তাঁরা বিফাই মাহালি ও বীণা সিংহ মাহালি। দুজনেই জন্মান্ধ।

বিফাইয়ের জন্ম জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) ক্রান্তি (Kranti) ব্লকের চ্যাংমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের যোগেশচন্দ্র চা বাগানে। চার বছর বয়সে তাঁকে নিয়ে মা চলে এসেছিলেন ধনতলায়। কখনও ক্রান্তি হাটের অস্থায়ী কুটির, কখনও অন্যের বাড়িতে থাকতেন তাঁরা। বছর তিনেক আগে মাকে হারান বিফাই। মা বেঁচে থাকতে দুঃখ-কষ্টের আঁচড়টি টের পাননি। কিন্তু তিনি মারা যেতেই সরাসরি সেই আঁচ পান বিফাই। শুরু হয় জীবনযুদ্ধে বেঁচে থাকার একক লড়াই।

শৈশব থেকেই তিনি পড়াশোনায় আগ্রহী ছিলেন। শুভাকাঙ্ক্ষীরা ভর্তি করে দিয়েছিলেন শালুগাড়ার দৃষ্টিহীন স্কুলে। কয়েক বছর সেখানে থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশও করেন। ওই স্কুলেই সহপাঠী সুরদাস শবরের সঙ্গে তৈরি হয় গভীর বন্ধুত্ব। ২০১৯-এ নিউচামটা চা বাগানে তাঁরই ডাকে ঘুরতে গিয়েছিলেন বিফাই। ছিলেন তাঁরই বাড়িতে। সেখানেই পরিচয় হয় খড়িবাড়ির মাধ্যমিক উত্তীর্ণ দৃষ্টিহীন বীণার সঙ্গে। ধীরে ধীরে প্রণয়। ২০২১-এ বিয়ে। শুরু হয় তাঁদের পথ চলা। তাঁদের দাম্পত্যের বয়স পেরোল চার বছর। অভাব তাঁদের নিত্যসঙ্গী। তবুও হাসিমুখে ধনতলায় এই দম্পতির দিনাতিপাত যেন রবির ভাষায়, ‘চিনিলাম আপনারে/ আঘাতে আঘাতে/ বেদনায় বেদনায়;/ সত্য যে কঠিন,/ কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,/ সে কখনো করে না বঞ্চনা।’

শীতের রোদ পিঠে যাচ্ছিলেন কাঠামবাড়ি। শুকনো মুড়ি আর জল দিয়ে ‘ব্রেকফাস্ট’ সেরে ‘লাঞ্চ’-এর জন্য আরও কিছুটা মুড়ি, বিস্কুট বেঁধে নিয়েছেন। যদি পথে সহায়তা মেলে তবে রাতের ডাল-ভাত নিশ্চিত হবে। এই চার বছরে তাঁদের উপর কম ঝড়ঝাপটা যায়নি। মাথার ওপর ছাদ ছিল না। ধনতলা হাটের পাশে কমিনিউটি হলে ক্রান্তি পঞ্চায়েত সমিতির বদান্যতায় মিলেছিল অসম্পূর্ণ এক ছোট্ট ঘর। সেখানেই দিন গুজরান। সভাপতি পঞ্চানন রায় জানান, খুব শীঘ্রই ঘরটির কাজ শেষ হবে। বিফাইয়ের কথায়, ‘আমি উচ্চমাধ্যমিক, বীণা মাধ্যমিক পাশ। একটা সম্মানজনক কাজ পেলে আমাদের চলে যেত।’

স্ত্রী হিসেবে বীণা সবসময় পাশে থাকেন। তাঁদের পরিচিত ঊষা রায় সিং বলেন, ‘কখনও ওদের একা একা দেখিনি, সবসময় একসঙ্গে। হাজার প্রতিকূলতা, ঝড়ঝাপটার মাঝেও কেউ কাউকে ছেড়ে যায়নি। ওদের ভালোবাসা সত্যিই স্মরণীয়।’ বীণার কথায়, ‘স্বামী হিসেবে বিফাই আদর্শ। আমাদের মধ্যে কখনও মনোমালিন্যও হয়নি। বহুদিন মুড়ি খেয়ে থেকেছি, কিন্তু কেউ কাউকে ছাড়িনি। ভবিষ্যতেও এভাবেই থাকব। সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে দুজন-দুজনকে এভাবেই আঁকড়ে ধরে থাকব।’

না, কারও বিরুদ্ধে ওঁদের কোনও অভাব বা অভিযোগ নেই। দৃষ্টি না থাকলেও ভালোবাসার মাসে এভাবেই হাতে হাত রেখে দুজন দুজনকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চান। অনেকটা যেন অমিতের মতোই বলতে চান, ‘তোমারে যা দিয়েছিনু তার/ পেয়েছ নিঃশেষ অধিকার।/ হেথা মোর তিলে তিলে দান,/ করুণ মুহূর্তগুলি গণ্ডূষ ভরিয়া করে পান/ হৃদয়-অঞ্জলি হতে মম।/ ওগো তুমি নিরুপম,/ হে ঐশ্বর্যবান,/ তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারি দান;
গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *