অনসূয়া চৌধুরী, জলপাইগুড়ি: এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় জলপাইগুড়ি জেলায় (Jalpaiguri) সেরা হয়েছে সোনাউল্লা স্কুলের ছাত্র কৌশিক ঘোষ। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৪। সে বাংলায় ৯৪, ইংরেজিতে ৯৫, অঙ্কে ৯৯, ভৌতবিজ্ঞানে ১০০, জীবনবিজ্ঞানে ১০০, ভূগোলে ৯৯ এবং ইতিহাসে ৯৭ নম্বর পেয়েছে। মাত্র দুই নম্বরের জন্য মেধাতালিকায় বাদ পড়েছে তার নাম। কৌশিক অবশ্য জানিয়েছে, দুই নম্বরের জন্য মেধাতালিকা থেকে বাদ পড়লেও পরবর্তীতে সে রিভিউ করাবে।
কৌশিকের বাবা পেশায় টোটোচালক। টোটো চালানোর পাশাপাশি যখন যেমন কাজ পান, তা করেন তিনি। বাড়িতে ছোট্ট একটি মুদি দোকান রয়েছে৷ সকালে ওই মুদি দোকান চালানোর পাশাপাশি সময় পেলে সেখানে বসেই লেখাপড়া করত কৌশিক। কৌশিকের ওই ছোট্ট ঘরজুড়ে বিভিন্ন গাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম, ইতিহাসের সাল ও তারিখ লেখা রয়েছে। এ বিষয়ে কৌশিক বলে, ‘এতসব নাম, তারিখ ও সাল যাতে ভুলে না যাই, তাই এভাবে লিখে রেখেছিলাম৷ চলতে ফিরতে সবসময় চোখে পড়লে ভালো মনে থাকে।’ সে আরও জানায়, বাবা কোনওদিন আর্থিক সমস্যার কথা তাকে বুঝতে দেননি। হাজার কষ্টের মধ্যেও দশম শ্রেণিতে সাতজন গৃহশিক্ষক রেখেছিলেন তার জন্য। কৌশিকের অভ্যাস রাত জেগে লেখাপড়া করা। জীবনের প্রথম পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার লক্ষ্য নিয়ে সে প্রস্তুতি নিয়েছিল। লেখাপড়ার পাশাপাশি সে মাঝেমধ্যে মোবাইল দেখত। যদিও সোশ্যাল মিডিয়ায় তার কোনও অ্যাকাউন্ট নেই। লেখাপড়া ছাড়াও বিভিন্ন কুইজ প্রতিযোগিতা, অঙ্ক মেধা অন্বেষণে কৃতিত্ব রয়েছে কৌশিকের। শুধু তাই নয়, তার ভালোবাসার তালিকায় রয়েছে অভিনয়, আবৃত্তি ও গান। তার পছন্দ মায়ের হাতের ডাল, ভাত, আলুসেদ্ধ। বাবা বিপ্লব ঘোষ ও মা ঝুনু ঘোষ বলেন, ছেলের স্বপ্ন এরপর বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে চিকিৎসক হওয়ার। আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করব যাতে কৌশিক আরও এগিয়ে যেতে পারে।
কৌশিকের এই সাফল্যে খুশি বাবা-মা সহ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গৃহশিক্ষকরাও। সোনাউল্লা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনির্বাণ সেন বলেন, ‘কৌশিকের পরিশ্রম ও অধ্যবসায় তাকে এই সাফাল্য এনে দিয়েছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সবসময় কৌশিকের পাশে আছে।’ কৌশিকের সাফল্যের খবর পেয়ে এদিন তার ছোট টিনের বাড়িতে এসে শুভেচ্ছা জানান বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গৃহশিক্ষকরা৷ তাঁরা কৌশিককে পুষ্পস্তবক ও মিষ্টি দিয়ে অভিনন্দন জানান।