ধূপগুড়ি: নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে চাকরিহারা শিক্ষকদের স্কুলে স্কুলে স্বেচ্ছাশ্রমের আহ্বান জানিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। অথচ খুদে স্কুল পড়ুয়াদের জন্য কলেজ প্রিন্সিপালকে ক্লাস করাতে দিয়ে শোকজের মুখে পড়েছেন জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) ধূপগুড়ি গাদং ২ জুনিয়ার বেসিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল সাত্তার। স্কুল শিক্ষা দপ্তর তথা জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের বিষনজরে পড়ে ইতিমধ্যেই লিখিত জবাবদিহি করতে হয়েছে প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে। সাত্তার অবশ্য বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমার কাছে যা যা জানতে চেয়েছে সবটাই বিস্তারিত লিখিত জানিয়েছি। সেসব নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলব না।’
ঘটনার সূত্রপাত গত ৪ এপ্রিল। ধূপগুড়ি গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ বিজয় দেবনাথ প্রাইমারি স্কুলে ‘ফান অ্যান্ড লার্ন’ কর্মসূচি বাস্তবায়নে গিয়েছিলেন। ধূপগুড়ি গার্লস কলেজের অধ্যাপকদের উদ্যোগে দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক শিক্ষামূলক একাধিক কর্মসূচি নেওয়া হয়। তারই অঙ্গ হিসেবে বুনিয়াদি শিক্ষা স্তরে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার আধুনিক ও মনোগ্রাহী পদ্ধতি নিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ এবং অধ্যাপকরা প্রাথমিক স্কুলগুলিতে গিয়ে পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের সমস্যা কোথায়, বোঝার চেষ্টা করেন।
‘ফান অ্যান্ড লার্ন’ শীর্ষক এই কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবেই সেদিন ধূপগুড়ি গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ ওই স্কুলে যান এবং পড়ুয়াদের সঙ্গে দীর্ঘসময় কথা বলেন। এরপর অভিভাবকদের সঙ্গেও তঁার কথা হয়। সেই আলোচনায় শিক্ষা ব্যবস্থার কিছু বিষয় নিয়ে সমালোচনাও হয়েছিল। এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও ভাইরাল হতেই তোলপাড় শুরু হয় জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদে। কেন অধ্যক্ষকে স্কুলে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তার কৈফিয়ত চাওয়া হয় প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে।
ধূপগুড়ি গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, ‘এই মুহূর্তে রাজ্য সরকার পোষিত প্রাইমারি স্কুলে যে মানের ইংরেজি পাঠ্যবই রয়েছে তা দেশের মধ্যে অন্যতম সেরা। সেই পাঠ্যবইকে পড়ুয়াদের কাছে আরও মনোগ্রাহী করে তুলতে কিছু পদ্ধতি নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন কাজ করছি। ন্যাক প্রতিনিধিদলের সামনেও সেটা আমরা তুলে ধরেছিলাম এবং প্রশংসা পেয়েছি। সেদিন সেই ‘ফান অ্যান্ড লার্ন’ নিয়েই পড়ুয়াদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। এর পিছনে বিতর্ক কেন হচ্ছে জানি না।’
কলেজের একজন অধ্যক্ষ প্রাথমিক পড়ুয়াদের অভিভাবকদের সঙ্গে শিক্ষা সংক্রান্ত আলোচনা করায় কী এমন মহাভারত অশুদ্ধ হল, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে স্থানীয় শিক্ষক মহলেও। এক প্রবীণ প্রাথমিক শিক্ষকের কথায়, যতদূর জানি এনিয়ে প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক আবদুল সাত্তারকে ওপর প্রচণ্ড মানসিক চাপ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে তাঁকে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। ধূপগুড়ি সার্কেলের এসআই তাপস দাস এই ইস্যুতে প্রধান শিক্ষকের লিখিত জবাবদিহি জমা দেওয়ার কথা মেনে নিয়েছেন। বিভাগীয় কর্তা এবং আধিকারিকরা প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হলেও এলাকার অভিভাবকরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ছেন।