অনীক চৌধুরী, জলপাইগুড়ি: দুর্গা ঠাকুরের মূর্তিতে মাটির শেষ প্রলেপ পড়ছে। প্রস্তুতি কত দূর তার খোঁজ নিতে শিল্পী জীবন পালের কাছে সপ্তাহে অন্তত একবার হলেও যাচ্ছেন পুজো উদ্যোক্তারা। কিন্তু এরই মাঝে বিভিন্ন পুজো কমিটির সদস্যদের মধ্যে কোথাও যেন বিষণ্ণতা। কারণ, আগের মতো নবযৌবনের যে বড্ড অভাব! তাঁদের পর এই পুজো কে করবেন সেই নিয়ে এখনই চিন্তিত পুজো কমিটিতে থাকা প্রবীণরা।
একসময় পুজোর আমেজ এলেই পাড়ার বড়দের সঙ্গে ছোটরাও বেরিয়ে পড়ত চাঁদা কাটতে। পুজোর জোগাড়, প্রস্তুতি সহ যাবতীয় পরিকল্পনায় নিজেদের উদ্যোগেই জড়িয়ে পড়তেন তরুণরা। কিন্তু এখন দুই-একজন তরুণ ছাড়া কেউই আসেন না চাঁদা কাটতে কিংবা পুজোর প্রস্তুতিতে যোগ দিতে। লোকবলের অভাবে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হিমসিম খাচ্ছে শহরের অলিগলিতে হওয়া ছোট পুজোগুলি (Jalpaiguri)।
মুহুরিপাড়ার সম্পাদক উত্তম বসুর কথায়, ‘আমাদের ছোটবেলায় পাড়ার বড়রা কখন আমাদের নিয়ে চাঁদা কাটতে যাবেন, সেই অপেক্ষায় থাকতাম। আর এখন চাঁদা কাটতে যাওয়ার সময় বৃদ্ধরা ছাড়া প্রায় কেউই থাকে না। বিগত চার-পাঁচ বছর ধরে তরুণদের অংশগ্রহণ কমে এসেছে। তারা শুধু পুজো উপভোগ করতে আসে, অংশ নিতে নয়।’
যদিও আশার কথা শোনালেন কদমতলা দুর্গাবাড়ি পুজো কমিটির উদ্যোক্তা কৌস্তভ বসু। তাঁর কথায়, ‘আমাদের কমিটিতে এখনও ১০-১২ জন নতুন প্রজন্মের ছেলেপুলে রয়েছে। তারা আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে।’ তবে পুজোর আয়োজনে যে আগের তুলনায় তরুণের সংখ্যা কমেছে সেই আক্ষেপ করলেন তিনিও। অনেক পুজো কমিটির মতে, অধিকাংশ পাড়ার ছেলেমেয়ে বাইরে পড়তে চলে গিয়েছেন কিংবা কাজের সূত্রে বাইরে রয়েছেন। তাছাড়া তরুণ প্রজন্মের অভ্যাস বদলেছে, জীবনশৈলী বদলেছে। তাই তাঁরা দায়িত্ব নিতে চাইছেন না।
স্টেশনপাড়ার এক পুজো কমিটির সদস্য অশোক চৌধুরীর কথায়, ‘বেশিরভাগ তরুণ এখন বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করে। তাদের কাজের সময়ের কোনও ঠিক থাকে না। কখন তারা আসবে এই ভরসায় বসে থাকলে পুজো নামানো আরও মুশকিল হয়ে পড়বে।’
প্রবীণ আয়োজকদের এমন দাবি কিন্তু উড়িয়ে দিলেন পাতকাটা পুজো কমিটির তরুণ তুর্কি কুণাল রায়। বললেন, ‘পাড়ার প্রবীণরা আমাদের সবসময় শিখিয়ে দিচ্ছেন কীভাবে পুজোর আয়োজন করতে হয়। পুজোর দায়িত্ব সকলের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করা হয়েছে। প্রবীণরা সবসময় দৌড়াদৌড়ি করতে পারেন না, সেগুলো আমরা করি। এছাড়া প্রত্যেক কাজের জন্য বয়স্কদের সঙ্গে তরুণ প্রজন্মও থাকছে।’
কুণাল যাই বলুক, পুজো কমিটিগুলোর সঙ্গে কথা বলে বেশ বোঝা গেল, চাঁদা তোলা কিংবা স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব নেওয়া থেকে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে যাওয়া বা হইহুল্লোড় করাই এখনকার প্রজন্মের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এক পুজো কমিটির সদস্যের কথায়, অনুদান ও বিজ্ঞাপনের টাকায় বড় পুজোগুলি চললেও ছোট পুজোগুলির ক্ষেত্রে লোকবলের অভাব। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সেই তাগিদ এখন আর নেই। আগে মা-ঠাকুরমারা দুর্গাপুজোর গুরুত্ব শেখাতেন ছোটদের। এখন সেই রীতি-রেওয়াজ প্রায় নেই। চাঁদা কাটা তো দূরের কথা, অঞ্জলি দিতে কজন আসে বলে প্রশ্ন তোলেন তিনি।