Jalpaiguri | দেবী দুর্গার আগে জুড়াবান্দার পুজো

Jalpaiguri | দেবী দুর্গার আগে জুড়াবান্দার পুজো

শিক্ষা
Spread the love


পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি : শিব ঠাকুর হুঁকো টানেন। কথ্য ভাষায় হুক্কা। তাই জোলাপাড়ার রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে শিব হলেন হুক্কাখাওয়া ঠাকুর। তাঁদের প্রাচীন লোকায়ত রীতিতে, প্রতিবছরই দুর্গাপুজোয় দেবী দুর্গার আগে পুজো পান হুক্কাখাওয়া ঠাকুর। স্থানীয় বুলিতে তিনিই জুড়াবান্দা ঠাকুর।

জলপাইগুড়ি শহর থেকে ১২ কিমি দূরে মোহিতনগর গোল গুমটি হয়ে পৌঁছানো যায় জোলাপাড়ায়। সেখানে দুটি প্রাচীন বট গাছের পাশেই রয়েছে হুক্কাখাওয়া জুড়াবান্দা ঠাকুরের মন্দির। ওই এলাকায় শতাধিক বছর ধরে বংশপরম্পরায় রাজবংশীরা জুড়াবান্দা ঠাকুরের পুজো করছেন। ওই মন্দিরের পাশেই স্থাপিত তাঁদের মাশান দেবতাও।

ওই মন্দিরের সামনের ফাঁকা মাঠে জোলাপাড়া তরুণ সংঘ প্রতিবছর দুর্গা ও কালীপুজো করে। সেখানে স্থায়ী দুর্গামণ্ডপ থাকলেও, বাইরে বাঁশের আলাদা মণ্ডপ করা হয়। জোলাপাড়া তরুণ সংঘ পুজো কমিটির চেয়ারম্যান দশরথ রায় বলেন, ‘হুক্কাখাওয়া ও পাশের হরি মন্দিরে দেবতারা নিত্যদিন পুজো পান। গ্রামের লোকায়ত ধারা অনুসারে দুর্গাপুজোর আগে জুড়াবান্দার পুজো করবেন দেউসি। তারপর ব্রাহ্মণ পুরোহিত দুর্গাপুজোয় বসবেন। আমাদের পুজো এবছর ৫০ বছরে পড়ল। এবারের বাজেট ৫ লক্ষ টাকা।’

স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য নৃপেন রায় বলেন, ‘হুক্কাখাওয়া লোকদেবতা খুবই জাগ্রত। পথচলতি যে কোনও মানুষ জুড়াবান্দা মন্দিরের সামনে দিয়ে গেলে প্রণাম করে যান। গাছের ডাল, পাটকাঠি, লতাগুল্ম জোড়া দিয়ে বেঁধে ভক্তি সহকারে মন্দিরের সামনে ছুঁড়ে দেন।’

জুড়াবান্দা মন্দিরে প্রতিদিন ফল, ফুল দিয়ে নিত্যপুজো করেন রাজবংশী দেউসি। লোকদেবতা জুড়াবান্দা বা হুক্কাখাওয়াকে দেখতেও শিব ঠাকুরের মতোই। হাতে হুক্কা ধরা ভঙ্গিতেই বিগ্রহ রাখা থাকে মন্দিরে। সাধারণত মাঘীপূর্ণিমাতে হুক্কাখাওয়ার পুজো হয়। চিরাচরিত রীতিতে এবারও মাটির হাঁড়িতে খই, দই, কলা, দুধ মেখে জুড়াবান্দাকে নিবেদন করা হবে।

হুক্কাখাওয়া দেবতার প্রসাদ হয় নিরামিষ। মাঘীপূর্ণিমায় বেশ ধুমধাম করে জুড়াবান্দার পুজো হয়। প্রতিবছরের মতো এবারও দুর্গাপুজোর চারদিন ভন্দাপাড়া, জোলাপাড়া, সর্দারপাড়া, ভায়াপাড়ার মানুষ মেতে উঠবেন পুজোর আনন্দে। তবে রীতি মেনে আগে হুক্কাখাওয়া দেবতাকে প্রণাম করে তবেই দুর্গামণ্ডপে যাবেন দর্শনার্থীরা।

লোকসংস্কৃতি গবেষক দিলীপ বর্মা জানান, অতীতে মানুষ হিংস্র বন্যপ্রাণীর উপদ্রব থেকে বাঁচাতে গাছ বা গুহায় আশ্রয় নিত। মানব সমাজে গাছপালার গুরুত্ব সেই থেকেই। তাই লোকদেবতা বা অপদেবতার হাত থেকে রেহাই পেতে মানুষ বৃক্ষ উপাসনা শুরু করে। তাই জোলাপাড়ার মন্দির আজও গাছের ডাল বেঁধে লোকদেবতার উদ্দেশে নিবেদন করা হয়।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *