Jalpaiguri | জলপাইগুড়ি নামে নতুন গাছের খোঁজ

Jalpaiguri | জলপাইগুড়ি নামে নতুন গাছের খোঁজ

আন্তর্জাতিক INTERNATIONAL
Spread the love


শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা: অজানা গাছপালা নিয়ে একটা বহুল প্রচলিত মিথ হল, আমাজনের গভীর অরণ্যে এখনও এমন অনেক গাছ রয়েছে, মানুষ যার খোঁজ রাখে না। আমাজন নাহয় বিশ্বের বৃহত্তম রেইনফরেস্ট, তা বলে জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) মালবাজার (Mal Bazar) শহর? মালবাজারের দমকলকেন্দ্রের উলটোপাশে, পুরোনো রেলস্টেশন লাগোয়া এলাকায়, সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের উলটোপাশে দেখা মিলেছে এমন এক গাছের, যা গত প্রায় ৫০ বছর ধরে রয়ে গিয়েছিল লোকচক্ষুর অন্তরালে। এর আগেও তার দেখা মিলেছিল জলপাইগুড়ি জেলাতেই। ১৯৭৫ সালে গাছটি এখান থেকে সংগৃহীত হলেও সেসময় তার কোনও নামকরণ হয়নি। ২০২২ সালে পরিণত ফল সহ গাছটির দেখা মেলে এই জেলাতেই। আর জেলার ভাবাবেগকে মাথায় রেখে বৃক্ষ জাতীয় ওই উদ্ভিদটির বিজ্ঞানসম্মত নাম রাখা হয়েছে প্রেমনা জলপাইগুড়িয়ানা।

এই নামকরণ করেছেন বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার প্রাক্তন বিজ্ঞানী ডঃ তাপসকুমার পাল। এদেশের গাছগাছালির বাইবেল হিসেবে পরিচিত বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া-র নিজস্ব জার্নাল নিলাম্বো। সেই জার্নালের সর্বশেষ প্রকাশিত ২০ জুলাইয়ের সংখ্যায় প্রেমনা জলপাইগুড়িয়ানা নিয়ে ওই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। সব মিলিয়ে উচ্ছ্বসিত পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলি থেকে শুরু করে জেলার অজানা দিক নিয়ে যাঁরা প্রতিনিয়ত চর্চা চালিয়ে যান, সংশ্লিষ্ট সমস্ত মহল।

চিরহরিৎ গাছটির স্থানীয় কোনও নাম রয়েছে কি না, তা বিজ্ঞানীরা জানতে পারেননি। আর্দ্র পরিবেশে জন্মায়। এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে ফুল ও ফল হয়। ফুলের রং সাদা। অনেকটা জামের মতো দেখতে হলেও আকারে অনেকটাই এই গাছের ছোট পাকা ফলের রং কালচে লাল। অজস্র ফল হয়। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই গাছের ফুল বহু কীটপতঙ্গের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। ফলে বাস্তুতন্ত্রেও ভূমিকা অপরিসীম।

আগে ফুল সহ গাছটির কথা জানা থাকলেও ফল সম্পর্কে প্রথম জানাজানি হয় মালবাজারের পরিমল মিত্র স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ডঃ শুভদীপ মজুমদারের হাত ধরে। তিনি বর্তমানে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে কর্মরত। ৫০ বছর আগে জেলার জুদাং নামে একটি স্থান থেকে উদ্ভিদ বিজ্ঞানী জেকে শিকদার ওই একই প্রজাতির গাছের নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। তবে সেসময় ফল দেখা যায়নি। ডঃ মজুমদার বলেন, ‘১৯৭৫ সাল থেকে আমাদের কাজের মধ্যবর্তী সময়পর্বে জলপাইগুড়ি কিংবা পশ্চিমবঙ্গের অন্য কোনও জায়গায় ওই গাছ দেখা গিয়েছে বলে কোনও রিপোর্ট নেই। ফলে জলপাইগুড়ির সঙ্গে এই গাছের সম্পর্ক যে অবিচ্ছেদ্য তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। নামকরণেও জেলার নাম থাকার বিষয়টি এখানকার বাসিন্দাদের কাছে গর্বের।’

ডঃ মজুমদার এর আগেও আরও নানা কাজ করেছেন। মালবাজারে থাকাকালীন নেওড়াভ্যালির জঙ্গলের বুনো ফুল নিয়েও একটি কাজ শুরু করেছিলেন। মালবাজারে কর্মরত থাকাকালীন রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে ডঃ মজুমদারের নজরে পড়েছিল এই গাছ। তিনি আর পাঁচজনের মতো পাশ কাটিয়ে যাননি। শুরু করেন গবেষণার কাজ। যোগাযোগ করেন ডঃ তাপসকুমার পালের সঙ্গে। তারপর জলপাইগুড়ির নাম জড়িয়ে যায় এই গাছের সঙ্গে।

এই নয়া আবিষ্কারে উল্লসিত হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন (ন্যাফ)-এর মুখপাত্র ও পরিবেশবিদ অনিমেষ বসু। তাঁর কথায়, ‘উত্তরবঙ্গের বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদকুল এখনও রহস্যের মোড়কে ঢাকা। এটা নিয়ে ধারাবাহিক কাজ হওয়া প্রয়োজন।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *