Jalpaiguri | গুগলে ৫৪ লক্ষের চাকরি জলপাইগুড়ির শ্রেয়ার

Jalpaiguri | গুগলে ৫৪ লক্ষের চাকরি জলপাইগুড়ির শ্রেয়ার

শিক্ষা
Spread the love


অনসূয়া চৌধুরী, জলপাইগুড়ি: যে পারে সে আপনি পারে, পারে সে ফুল ফোটাতে। রবীন্দ্রনাথের কবিতাটা অনায়াসে ট্যাগলাইন হতে পারে মেয়েটার গল্পে। অনটনের সঙ্গে ২০ বছর লড়াইয়ে সেই রূপকথা লিখেছেন শ্রেয়া সরকার।

জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) পূর্ব অরবিন্দনগরে নিতান্তই ছাপোষা পরিবার। বাবা শহরের একটি ফার্নিচারের দোকানের সামান্য কর্মচারী, মা গৃহবধূ৷ বাবা আবির সরকার আবার কাজে না গেলে বেতন পান না। এমন পরিবারে যেন ঈশ্বরপ্রদত্ত মেধা নিয়ে জন্মেছে মেয়েটা। আর কপালজোরে পেয়েছিলেন দাদু দুলালচন্দ্র দে-কে। নাতনির মেধা দেখে তিনি যেন সর্বস্ব পণ করেছিলেন। তাই এমন অভাবের সংসারেও জলপাইগুড়ির নামী ইংরেজিমাধ্যম বেসরকারি স্কুলে ভর্তি হন শ্রেয়া।

গত ১৪ জুলাই গুগলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছেন শ্রেয়া। কীভাবে সম্ভব হল লড়াইটা? মুখচোরা শ্রেয়া বলেন, ‘বাবা আর দাদু ভর্তি করে দিয়েছিল ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে। আইসিএসই-তে ভালো রেজাল্ট করায় স্কলারশিপ পেয়েছিলাম। তাই তারপর থেকে আর পড়ার খরচ খুব একটা লাগেনি। তারপর জয়েন্টের অ্যাডভান্সেও পেয়েছিলাম। কিন্তু বাড়ি থেকে দূরে গিয়ে পড়াশোনা করানোর সামর্থ্য আমার পরিবারের নেই। তাই জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হই৷’

এরপরই যেন স্বপ্নের দৌড় শুরু শ্রেয়ার। কলেজের টিউশন ফি ওয়েভার কোটায় চার বছর সম্পূর্ণ নিখরচায় পড়ার সুযোগ পেয়ে যান। কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি প্রথম বর্ষে গুগলের মেন্টরশিপ প্রোগ্রামেও যোগ দেন শ্রেয়া। অনলাইনে ২ বছর সেই কোর্স করেন। এজন্য গুগল থেকে ১ লক্ষ টাকা স্টাইপেন্ডও পেয়েছিলেন। তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় কলেজের গুগল ডেভেলপার স্টুডেন্ট ক্লাবেরও রিলেশনশিপ লিড-এর দায়িত্ব সামলে শ্রেয়া বুঝিয়ে দেন, তিনি লম্বা দৌড়ের ঘোড়া। এরপর ভারতের ৪৫ জন সেরা পড়ুয়ার মধ্যে নির্বাচিত হয়ে গুগল জেনারেশন স্কলারশিপ পায় তিনি। সেখানে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২১ হাজার টাকা পেতেন মাসে।

শ্রেয়া বলেন, ‘বাড়িতে অনটন থাকায় স্কলারশিপের টাকাটা বই কেনার পাশাপাশি পড়াশোনায় এগিয়ে যেতে আমাকে খুবই সাহায্য করেছে।’ কথাটা যে কতটা সত্যি, তা বোঝা যায় শ্রেয়ার বাবা আবিরের সঙ্গে কথা বললে। তিনি জানান, শ্রেয়ার দাদুই ওর কান্ডারি। উনি গ্রুপ-সি সরকারি কর্মী ছিলেন। তখনকার বেতনের সামান্য টাকাতেই জোর করে নাতনিকে ভর্তি করিয়ে দেন ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে।

কয়েকবছর আগে দাদুর টিনের চালের বাড়িতেই সকলে একসঙ্গে থাকতেন। দাদু অবসর নেওয়ার সময় পাওয়া টাকায় ঘরটা পাকা হয়েছে। নিজের বাড়ির পাশেই নাতনিকে বাড়ি করার জন্য কিছুটা জমি দিয়েছেন দাদু। সরকারি প্রকল্পে পাওয়া ঘর তৈরির কাজ চলছে সেখানে।

গুগলে কীভাবে চাকরি পেলেন? শ্রেয়া বললেন, ‘তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় গুগলে ইন্টার্নশিপ করেছিলাম। সেই কাজ ছিল ১২ সপ্তাহের। যেখানে ১ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা স্টাইপেন্ড পেতাম। সেসময় আমার কাজ ওদের ভালো লাগে। এরপর আমাকে প্রি-প্লেসমেন্ট অফার দেওয়া হয়৷ এছাড়াও আমি অন ক্যাম্পাসিংয়ে সিএসসি-তে আর অফ ক্যাম্পাসিংয়ে অ্যামাজন ও গুগলে সুযোগ পেয়েছিলাম। সেখান থেকে গুগলকেই বেছে নিয়েছি।’

ছাত্রীর সাফল্যে জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ অমিতাভ রায় উচ্ছ্বসিত। কলেজের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের প্রধান ডঃ সুভাষ বর্মন বলেন, ‘শ্রেয়া নিয়মিত ক্লাস করত। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী। আমরা ওর সাফল্যে অত্যন্ত খুশি।’

দাদু আর বাবা-মায়ের কথা এক মিনিটের জন্যও ভোলেন না শ্রেয়া। আপাতত পরিবার থেকে অনেক দূরে সে বেঙ্গালুরুনিবাসী। গুগলের পে প্যাকেজ কত? লাজুক হেসে শ্রেয়া জানালেন, বছরে ৫৪ লক্ষ টাকা।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *