পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি: ডুয়ার্সের বনাঞ্চল থেকে বেত-নলখাগড়ার মতো গাছ এবং সবুজ তৃণভূমি ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে তৃণভোজীদের খাদ্যসংকট দেখা দিচ্ছে। গত কয়েকবছর ধরে নানা মহল থেকে এমনই আশঙ্কার কথা উঠে আসছে। তাই বেত-নলখাগড়ার চাষ জঙ্গল এলাকায় বাড়ানোর কাজ শুরু করল জলপাইগুড়ি বনবিভাগ।
দলগাঁও ফরেস্ট রেঞ্জে বেত গাছ পাইলট প্রকল্প হিসেবে রোপণ করে সাফল্য মেলায় এবার নাথুয়া ফরেস্টেও বেত গাছ রোপণের পরিকল্পনা নিয়েছে জলপাইগুড়ি বনবিভাগ। বেতের পরে নলখাগড়ার চাষ বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে বনবিভাগ। জলপাইগুড়ি বনবিভাগের ডিএফও বিকাশ ভি জানান, বেত গাছ হাতি, হরিণ, বাইসনের প্রিয় খাবার। কিন্তু সেই গাছ আজ ডুয়ার্সের জঙ্গল থেকে প্রায় হারিয়ে গিয়েছে। তাই বীরপাড়ার দলগাঁও ফরেস্ট রেঞ্জে ২ হেক্টর জমিতে ৩ হাজার ৬০০টি বেত গাছের চারা ২০২২ সালে পাইলট প্রোজেক্ট হিসেবে রোপণ করা হয়েছিল। এক বছরে তা থেকে বীজ তৈরি করে নাথুয়া রেঞ্জেও বেতের চারা রোপণ করা হচ্ছে। জলপাইগুড়ি বনবিভাগের সমস্ত রেঞ্জ ও বিটের আওতায় থাকা জঙ্গল এলাকায় বেত গাছ রোপণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে তৃণভোজীদের পর্যাপ্ত খাদ্যের জোগান হবে বলে মনে করছেন তঁারা।
জলপাইগুড়ি সায়েন্স অ্যান্ড নেচার ক্লাবের সম্পাদক ডঃ রাজা রাউত বলেন, ‘বেত ও নলখাগড়া যে কোনও তৃণভোজীর প্রিয় খাদ্য। কিন্তু জঙ্গলের ভেতর বিভিন্ন সময়ে বন্যপ্রাণীর শুমারিতে গিয়ে দেখা যায়, সেসব গাছ প্রায় উধাও হয়ে গিয়েছে। বন দপ্তর সঠিক উদ্যোগ নিয়েছে।’ একই বক্তব্য পরিবেশকর্মী শ্যমাপ্রসাদ পান্ডেরও।
গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে বেত ও নলখাগড়া। বঁাশ, বেতের মতো প্রাকৃতিক উপাদানগুলিই গ্রামীণ হস্তশিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছে। অন্যদিকে, নলখাগড়া সরস্বতীপুজো সহ নানা প্রয়োজনে দরকার পড়ে। এক দশক আগেও ডুয়ার্সের জঙ্গলে প্রচুর বেত ও নলখাগড়ার গাছ দেখা যেত। হাতি সহ অন্যান্য তৃণভোজী প্রাণীর প্রিয় খাদ্য ছিল গাছ দুটির কচি পাতা। কিন্তু বর্তমানে বেত গাছ ডুয়ার্সের জঙ্গল থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে বললেই চলে। লোকসংস্কৃতির গবেষক দিলীপ বর্মা বলেন, ‘শুধু ধর্মীয় কাজকর্মেই নয়, বেতের কদর আছে বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প সামগ্রী তৈরিতেও। বাঁশ গ্রাম্য এলাকায় থাকলেও বেত গাছ লোপ পেয়েছে। পুনরায় ফিরিয়ে আনার এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’