শুভজিৎ দত্ত ও অভিরূপ দে, নাগরাকাটা ও ময়নাগুড়ি: শারীরিক সমস্যাকে অগ্রাহ্য করে, স্রেফ ইচ্ছাশক্তির জোরে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে গবেষণার সুযোগ করে নিয়েছেন বানারহাটের কন্যা। অন্যদিকে, ময়নাগুড়ির দুই ছাত্রী তিস্তায় ভেসে যাওয়ার হাত থেকে শিশুকে উদ্ধার করে ফিরিয়ে দিয়েছিল তার মায়ের কাছে। জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) জেলার ৩ সাহসী কন্যার কৃতিত্বকে কুর্নিশ জানিয়ে ১৪ অগাস্ট, কন্যাশ্রী দিবসে (Kanyashree diwas) কলকাতার ধনধান্য অডিটোরিয়ামের অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেবে রাজ্য সরকার। উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এঁদের প্রথমজন প্রেরণা কুণ্ডু ও অন্য দুজন ময়নাগুড়ি ব্লকের মরিচবাড়ি এলাকার পল্লবী কীর্তনিয়া ও মল্লিকা পাল।
প্রেরণা সিনিয়ার কন্যাশ্রী ও পল্লবী-মল্লিকা সক্রিয় কন্যাশ্রী হিসেবে মনোনীত হয়েছে। জেলা শাসক শামা পারভিন বলেন, ‘ওদের প্রত্যেকের জন্য আমরা গর্বিত।’
বানারহাটের ক্ষুদিরামপল্লির প্রেরণার বয়স যখন মাত্র সাড়ে ৪ বছর তখন মস্তিষ্কে জটিল অস্ত্রোপচার হয়। ৪৮ ঘণ্টা কোমায় ছিল একরত্তি। জীবনে দমে না গিয়ে হয়ে ওঠেন অন্যের অনুপ্রেরণার কারণ। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে নেট উত্তীর্ণ হন তিনি। পান জুনিয়ার রিসার্চ ফেলোশিপ। সুযোগ মেলে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে দেশের অন্যতম সম্মাননীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করার। মেয়ের সাফল্যের স্বীকৃতিতে দারুণ খুশি মা বনশ্রী ও বাবা দেবাশিস কুণ্ডু। বনশ্রী বলছেন, ‘ওর শারীরিক পরিস্থিতিতে পড়াশোনায় চাপ দেওয়া সম্ভব ছিল না। মনের জোরে এগিয়েছে।’
অন্যদিকে, অভাবের তাড়নায় দেড় বছরের শিশুসন্তানকে তিস্তায় ভাসিয়ে দিয়েছিলেন মা। খুদেকে উদ্ধার করে দুই স্কুল ছাত্রী পল্লবী ও মল্লিকা। উত্তরবঙ্গ সংবাদে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরেই হইচই পড়ে যায়। গত ৬ জুন ঘটনার সময় মল্লিকা ও পল্লবী তিস্তা নদীর ঘাটে গল্প করছিল। মা নিজের সন্তানকে তিস্তার জলে ভাসিয়ে দেওয়ার ঘটনা দুই বান্ধবী দেখতে পায়। ছুটে গিয়ে উদ্ধার করে শিশুটিকে। উত্তরবঙ্গ সংবাদে খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে জলপাইগুড়ির জেলা শাসকের পক্ষ থেকে দুই পড়ুয়াকে সংবর্ধিত করেন ময়নাগুড়ির বিডিও।
সংবর্ধনা প্রাপ্তির খবরে উচ্ছ্বসিত দুই সাহসিনী। পল্লবী ও মল্লিকা ময়নাগুড়ি দোমোহনি পলহোয়েল উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। মল্লিকার সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘কোনওদিন ভাবতে পারিনি এমন সংবর্ধনা পাব।’ পল্লবীর কথায়, ‘আমি খুব খুশি।’ পলহোয়েল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, ‘পল্লবী ও মল্লিকার সাহসিকতার জন্য আমরা গর্বিত। ওদের দেখে স্কুলের অন্য পড়ুয়ারা উদ্বুদ্ধ হবে।’
ময়নাগুড়ির বিডিও প্রসেনজিৎ কুণ্ডুর কথায়, ‘ওরা ময়নাগুড়ির গর্ব। আগামীতে আরও ভালো কাজের নজির তৈরি করবে বলে বিশ্বাস করি।’ মরিচবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য শিউলি বাউলি বলেন, ‘ওরা এখন গ্রামের নয়নের মণি। সবার মুখে শুধু পল্লবী ও মল্লিকার কথা।’