শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা: বোনাস তো দূর অস্ত, এমনকি বকেয়া মজুরিও। ভাগ্যের পরিহাস এমন, সেই বকেয়া দেওয়ার কেউ নেই। পরিত্যক্ত জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) রেডব্যাংক চা বাগানে (Pink Financial institution Tea Backyard) এবার তাই সিংহবাহিনীর আরাধনা ঘিরে যাবতীয় উচ্ছ্বাস উবে গিয়েছে কর্পূরের মতো। তল্লাটজুড়ে শুধু বিষাদের নিস্তব্ধতা। যেখানে আশপাশের আর পাঁচটা চা বাগানে মণ্ডপ তৈরির কাজ প্রায় শেষের পথে, সেখানে ডেকোরেটারকে অগ্রিম দিতে না পারায় রেডব্যাংকে শুধু দাঁড়িয়ে আছে কাঠামোর কয়েকটি বাঁশ। সপ্তমীর মধ্যে বাগান স্বাভাবিক না হলে পুজোয় রাস্তায় বসে থাকার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন বারবার দুর্ভোগের শিকার শ্রমিকরা।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে রেডব্যাংকে কোনও পরিচালক নেই। যিনি গত কয়েক মাস ধরে বাগান চালাতেন, নথিপত্র না পাওয়ার কারণ দেখিয়ে হাত তুলে দিয়েছেন। খাতায়-কলমে যাঁর মালিকানা, তিনি আর্থিক অনটনের কারণে আগেই দায়িত্ব ছাড়েন। এমন পরিস্থিতিতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর জলপাইগুড়িতে রেডব্যাংক নিয়ে শ্রম দপ্তরের ডাকে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হলেও কোনও সমাধানসূত্র বেরিয়ে আসেনি। এদিকে, পুজো যত এগিয়ে আসছে ততই হতাশা গ্রাস করছে একসময়ের সচ্ছল বাগানটিকে।
দিনকয়েক আগেও বাগান খোলা ছিল। শ্রমিকরা নিজেদের মধ্যে সভা করে উমাবরণের যাবতীয় পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলেছিলেন। প্রত্যেকে চাঁদা দেবেন ঠিক হয়। দিয়ে দেওয়া হয় প্রতিমা ও মণ্ডপ তৈরির বরাত। তবে বিপর্যয় নামতেই পুজোর প্রস্তুতিতে এখন চরম ভাটা। শ্রমিক ধনেশ নাথ বলেন, ‘ঘরে ঘরে অনটন। শিশুরা গাড়িভাড়ার অভাবে বানারহাটে স্কুলে যেতে পারছে না। নতুন পোশাক কেনা নয়, এখানে এখন রান্নাঘরের উনুন জ্বালানো প্রতিদিনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শ্রমিকরা যে চাঁদা দেবেন সেই পরিস্থিতি কারও নেই। একমাত্র ভরসা সরকারি অনুদানের ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। এদিন চেক জমা দেওয়ার পর ব্যাংক বলে দিয়েছে ক্লিয়ার হতে অন্তত দিনসাতেক সময় লাগবে। ততদিনে তো পুজো কার্যত পেরিয়ে যাবে। ধারবাকি করে কি মায়ের আরাধনা সম্ভব?’
সুশীল পাল নামে এক কর্মচারী বলেন, ‘৪ দিনের পুজো করতে অন্তত ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা লাগে। সরকারি অনুদান যা মিলেছে, যথেষ্ট নয়। কীভাবে কী হবে, কেউ বুঝতে পারছি না। সপ্তমীর মধ্যে বাগান না খুললে, সেদিন থেকে সমস্ত শ্রমিক লাগোয়া ১৭ নম্বর জাতীয় সড়কে বসে থাকবেন। আমাদের হারানোর আর কিছু অবশিষ্ট নেই।’ পুজো কমিটির এক কর্তা গোপাল বাসফোর বলেন, ‘২০ বছর অনটনের সঙ্গে ঘর করে, ২০২২-এ যখন বাগান খোলে সবাই নতুন করে স্বপ্ন দেখেছিলাম। ৩ বছরের মধ্যে সেই আগের কালো দিন ফিরে এসেছে। প্রশাসন উপযুক্ত পদক্ষেপ করবে বলেই বিশ্বাস করি।’