অরুণ ঝা, ইসলামপুর: মৃত নবজাতককে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বেনজির নিদান ইসলামপুর সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের (Islampur Tremendous Speciality Hospital) এক চিকিৎসকের। প্রতিবাদ করায় ওই চিকিৎসক উলটে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ। অমানবিক এই ঘটনায় মঙ্গলবার গভীর রাতে ইসলামপুর সুপারস্পেশালিটিতে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে ক্ষোভ উগরে দেন মৃতের পরিবারের সদস্যরা।
অভিযোগ, ভর্তি না করেই সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিটে (এসএনসিইউ) নবজাতককে নিয়ে যান স্বাস্থ্যকর্মীরা। সেখানে তার বুকে ইনজেকশন দেওয়ার একটু পরেই শিশুর মৃত্যু হয়। এরপরেই মৃত নবজাতককে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। মৃতকে কেন মেডিকেলে রেফার করা হচ্ছে বলতেই পরিবারের সদস্যদের পুলিশ ডেকে গ্রেপ্তার করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বচসা বড় আকার ধারণ করলে ইসলামপুর থানার আইসি হীরক বিশ্বাস পুলিশবাহিনী নিয়ে পৌঁছান সুপারস্পেশালিটিতে। খবর পেয়ে পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার অমলকুমার সরকার হাসপাতালে গিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন। অমল বলেন, ‘মৃত শিশুকে নথিপত্র ছাড়া কীসের ভিত্তিতে চিকিৎসক মেডিকেলে নিয়ে যেতে বললেন? এসব কী চলছে হাসপাতালে?’
যদিও হাসপাতালের সহকারী সুপার মুর্তজা আলির দাবি, ‘নবজাতকের শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল না বলেই মানবিক কারণে ভর্তির নথিপত্র ছাড়াই তাকে এসএনসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। শিশুটির অবস্থা সংকটজনক হওয়ায় চিকিৎসা দিয়ে বাইরে নিয়ে যেতে বলা হয়। শিশুটি হাসপাতালে নয়, হাসপাতাল থেকে নীচে নামার সময় মারা গিয়েছে। চিকিৎসায় গাফিলতি সহ অমানবিক আচরণের অভিযোগ ঠিক নয়।’
এদিন শিশুটি অসুস্থ হলে পরিবারের সদস্যরা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যান চিকিৎসার জন্য। অভিযোগ, ভর্তির নথিপত্র তৈরি না করেই দ্রুত স্বাস্থ্যকর্মীরা শিশুটিকে এসএনসিইউতে নিয়ে যান। সেখানে তার বুকে একটি ইনজেকশন দেওয়ার পরেই শিশুটি মারা যায়। এরপর ওই মৃত শিশুটিকে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রেফার করেন কর্মরত চিকিৎসক বলে অভিযোগ। পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পেরে চিকিৎসকের কাছে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ চাইলে পুলিশকে দিয়ে গ্রেপ্তার করিয়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, হাসপাতাল থেকে মৃত শিশু ও পরিবারের সদস্যদেরকে বাইরে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সন্তানহারা মা-বাবা নিরুপায় হয়ে হাসপাতালের সামনে মৃত শিশুকে নিয়েই অবস্থান বিক্ষোভে বসে পড়েন।
মৃত শিশুর মা নিগারা খাতুন বলেন, ‘ওরা ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলল। এরপর বলছে মেডিকেলে নিয়ে যেতে।’ মৃত শিশুর বাবা সানাউল্লা বলেন, ‘মৃত ছেলেকে নিয়ে নথিপত্র ছাড়াই চিকিৎসক আমাকে মেডিকেলে যেতে বলেছিলেন। প্রশ্ন করতেই চিকিৎসকের জবাব, তাহলে বাড়ি নিয়ে গিয়ে ফেলে দাও।’ খবর পেয়ে হাসপাতালে যান ইসলামপুর পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার অমলকুমার সরকার। খবর পেয়ে পুলিশও যায়। অমল বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে এমন অমানবিক ঘটনা ভাবতেও অবাক হচ্ছি। কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের একাংশের আচরণ অত্যন্ত খারাপ। আমরা পাশে এসে না দাঁড়ালে অসহায় সন্তানহারা বাবা-মাকে এরা ফাঁসিয়ে দিত।’