অরুণ ঝা, ইসলামপুর: বাংলাদেশি নাগরিক হয়ে ভুয়ো শিক্ষাগত যোগ্যতার শংসাপত্র জোগাড় করে বহালতবিয়তে সরকারি চাকরি করছেন ‘মা’। এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ সৎছেলে উত্তম দাসের। সোমবার এই মর্মে উত্তম ইসলামপুরের মহকুমা শাসকের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত অনীতারানি দাস ইসলামপুর (Islampur) অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের দপ্তরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। শুধু তাই নয়, উত্তমের বাবা শংকরচন্দ্র দাসও সেচ দপ্তরের কর্মী।
উত্তমের দাবি, তাঁর সৎমা অনীতা একজন বাংলাদেশি নাগরিক। তিনি অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ শিক্ষাগত যোগ্যতার ভুয়ো শংসাপত্র জোগাড় করে ল্যান্ড লুজার ক্যাটিগোরিতে চাকরি করছেন। যদিও অনীতা দাবি করেছেন, উত্তম দাস বলে কাউকে তিনি চেনেন না। তাঁর স্বামী আগে বিয়ে করেছেন বা ওই পক্ষে স্বামীর কোনও সন্তান আছে বলে তাঁর জানা নেই। তবে বাংলাদেশি নাগরিক হওয়ার প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর না দিয়ে অনীতা মোবাইল ফোনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
শংকর অবশ্য স্বীকার করেছেন, উত্তম তাঁর প্রথমপক্ষের সন্তান। তাঁর মন্তব্য, ‘পরিবারের কোনও সদস্য যদি পরিবারকে হেনস্তা করতে চায় সেটি দুর্ভাগ্যের। পরিবারের বিষয় পরিবারেই থাকা উচিত।’ অনীতার বাংলাদেশি নাগরিকত্ব ও চাকরির প্রশ্নে শংকরের যুক্তি, ‘সরকার যখন কাউকে চাকরি দেয় তখন সবকিছু খতিয়েই দেয়। তাছাড়া অন্য কোনও দেশ থেকে কাউকে বিয়ে করে নিয়ে এলে সে তো আমার পরিচয়েই চলে এল।’
অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক শুভঙ্কর নন্দী বলেন, ‘সরকারি কাজে বাইরে আছি। বিষয়টি শুনেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেলে যথাযথ তদন্ত করে দেখা হবে।’ মহকুমা শাসক প্রিয়া যাদব উত্তমের দায়ের করা অভিযোগের কথা স্বীকার করেছেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে বলা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কেন সৎমায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলেন? এই প্রশ্ন করতেই উত্তমের জবাব, ‘অনীতাদেবীর বাবা-মা সকলে বাংলাদেশি নাগরিক। আমার মায়ের মৃত্যুর পর বাবা বাংলাদেশে গিয়ে ওঁকে বিয়ে করেন। এরপর তিনি রামগঞ্জে শাস্ত্রীনগর গ্রামে আসেন। আমার ও দিদির ওপর নির্যাতন শুরু করেন। আমি রায়গঞ্জের এক অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছি। আর দিদিকে ইসলামপুরে অপ্রাপ্তবয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়।’
রামগঞ্জের শাস্ত্রীনগরের শংকরচন্দ্র দাসের প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, শংকর ওরফে চান্দুর দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রী অনীতা। তাঁকে বাংলাদেশ থেকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছেন। ফলে অনীতা কীভাবে ভারতে এসে পড়াশোনা করলেন আর চাকরিই বা করছেন কীভাবে তা নিয়ে এলাকায় কানাঘুষোর শেষ নেই। উল্লেখ্য, চান্দুর আগের পক্ষে এক ছেলে ও এক মেয়ে ছিল। ছেলের ওপর অকথ্য অত্যাচার করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন চান্দুর দ্বিতীয় স্ত্রী। তাছাড়া অনীতাকে কোনওদিন স্কুলে যেতে দেখা যায়নি। ফলে অনীতা কীভাবে রামগঞ্জ হাইস্কুল থেকে শংসাপত্র পেলেন তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাসিন্দারা।
অনীতাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রথমে বলেছেন, ‘আমি সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতে চাই না।’ পরে তাঁকে একের পর এক প্রশ্ন করতেই তাঁর মন্তব্য, ‘সবটাই ভিত্তিহীন অভিযোগ। আমি রামগঞ্জ হাইস্কুলে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। উত্তম বলে কাউকে আমি চিনি না। আমার স্বামীর সঙ্গে আমি কথা বলব।’ বাংলাদেশ থেকে বিয়ের আগে না পরে এসেছেন? এই প্রশ্ন শুনতেই অনীতা ফোন কেটে দেন।
মহকুমা শাসক বলেছেন, ‘লিখিত অভিযোগের সঙ্গে সাপোর্টিং ডকুমেন্ট অভিযোগকারী দেননি। যদিও বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ পাঠানো হয়েছে।’