উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ক্রমশ কি বুদ্ধিমত্তার (Intelligence Quotient) হার কমছে? বোকা হয়ে যাচ্ছে মানুষ? সম্প্রতি বেশ কিছু আন্তর্জাতিক গবেষণায় কিন্তু এই চমকে দেওয়া তথ্যই উঠে এসেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষকরা বেশ কিছু সময় ধরেই কিন্তু এই প্রবণতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছেন। এবং এটা কিন্তু শুধু উন্নত দেশের সমস্যা নয়, বরং উন্নত-অনুন্নত সব দেশকেই এই প্রবণতা গ্রাস করতে চলেছে।
সম্প্রতি ফিনান্সিয়াল টাইমসের (Monetary Instances) তরফে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের (Michigan College) একটি সমীক্ষাকে হাতিয়ার করে যে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে পরিষ্কার যে মানুষের মেধা ও জ্ঞানজনিত ক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। বিশেষ করে এর শিকার হচ্ছে কিশোর-তরুণ ও প্রাপ্ত বয়স্করাও। শুধু মাত্র আইকিউ জনিত সমস্যার ঘাটতি দেখা যাচ্ছে এমনটা নয়, বরং মানুষের মনোযোগের সময়কাল, স্মৃতিশক্তি, মৌলিক যুক্তি সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সমীক্ষায় গবেষকরা দেখছেন, মনোযোগী থাকা, সহজ সমস্যার সমাধান নিজে করা, বা মৌলিক তথ্য প্রক্রিকরণের মতো কিছু কাজ যা অতীতে অনেক সহজেই করা যেত এখনকার তরুণ প্রজন্ম তা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছে। অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে মস্তিস্কের কাজ করার পদ্ধতিতে বেশ কিছু গুরুতর পরিবর্তন হচ্ছে।
এখন পাতা উলটে বই পড়ার অভ্যেস বদলে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই স্ক্রলিংয়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে এই প্রজন্ম। এটা অভ্যেসের ক্ষেত্রে অবশ্যই একটা গুরুতর পরিবর্তন। ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর দ্য আর্টসের (Nationwide Endowment for the Arts) একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ২০২২ সালে, ৩৮ শতাংশেরও এরও কম সংখ্যায় আমেরিকান বিগত বছরে কোনও উপন্যাস বা ছোটগল্প পড়েছেন। ২০১২ সালে এই সংখ্যাটা ছিল ৪৫ শতাংশ। যা কিনা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। ফিনান্সিয়াল টাইমসের ব্যাখ্যা, আজকের তরুণ প্রজন্ম পড়া বা মানসিক উদ্দীপনামূলক কাজে জড়িত থাকার চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বা ডিজিটাল স্ক্রিনে সময় কাটাতে বেশি পছন্দ করে। এটি কেবল তাদের পছন্দের পরিবর্তন নয়; বরং তাদের মস্তিষ্কের কাজ করার পদ্ধতিগত পুনর্নির্মাণ বলা যেতে পারে।
এটি আমেরিকা বা পাশ্চাত্যের দেশগুলির সমস্যা, এমনটা কিন্তু নয়। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের (Organisation for Financial Co-operation and Development) তরফে ২০২৩ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মাত্র ৩৪ শতাংশ মার্কিন নাগরিক বিজ্ঞান সংক্রান্ত মৌলিক জ্ঞান বা গবেষণার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন স্কোর করেছে। যা ২০২২ সালে ২৯ শতাংশ ছিল। তবে শুধু আমেরিকা নয়, অন্যান্য দেশেও মৌলিক যুক্তি এবং সাক্ষরতার ক্ষেত্রে একই রকম পতনের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। বিশ্বের ৯০টি দেশ জুড়ে, ১৫ বছর ছাত্রছাত্রীদের উপর আন্তর্জাতিক ছাত্র মূল্যায়ন প্রোগ্রাম (Programme for Worldwide Scholar Evaluation) অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে উন্নত-অনুন্নত অনেক দেশই অঙ্ক, বিজ্ঞান ও পঠনপাঠনের মতো বিষয়ে বিগত বছরগুলির তুলনায় অনেক কম স্কোর করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এর পেছনে স্ক্রিন সংস্কৃতির উত্থানের সঙ্গে পাঠ অভ্যেসের পতন এমনকী, অনলাইনে তথ্যভাণ্ডারের সঙ্গে আমরা কীভাবে যোগাযোগ করি তার পরিবর্তন-সবকিছু একসঙ্গে কাজ করেছে। যখন সবকিছু এক ক্লিকেই মিলছে তখন আমাদের বেশি কিছু মনে রাখা বা কোনও কিছু নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজনটাই আর থাকছে না। এতে যেই ক্ষমতাগুলির সহজাত ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা কাজ করতাম তার ধার অনেকটাই কমে আসছে।
এখন প্রশ্ন হল এই প্রবণতার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া কি সম্ভব? হয়তো সম্ভব, তবে তাতে কিছুটা সময় নিশ্চই লাগবে। এই প্রবণতা প্রজন্মগত ক্ষতিতে পরিণত হওয়ার আগেই কিভাবে আমরা শিক্ষা দেই, কাজ করি বা তথ্যের সঙ্গে যোগাযোগ সাধন করি তার পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন।