নয়নিকা নিয়োগী, কলকাতা : চিকেন নেককে ‘আগলে রাখা’র পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব ভারত ও নেপালের সঙ্গে সংযোগ বাড়াতে উত্তরবঙ্গজুড়ে চার লাইনের রেল ব্যবস্থা তৈরির আশ্বাস দিলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণো। শিলিগুড়ির সঙ্গে নেপাল, বিহার ও উত্তর-পূর্ব ভারতের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও মসৃণ করতে চাইছে রেলমন্ত্রক। যে কারণেই নতুন রেললাইন পাতা, রেল মানচিত্রে নতুন এলাকাকে নিয়ে আসার উদ্যোগ। লঘু উদ্যোগ ভারতী ও কলকাতার জাতীয় গ্রন্থাগারের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘উদ্যমী সম্মেলন’-এ উপস্থিত হয়ে এদিন রেলমন্ত্রী চার লাইনের কথা তুলে ধরেন। নেপালের সঙ্গে যে রেল যোগাযোগ গড়ে তোলার লক্ষ্য, স্পষ্ট করেন বৈষ্ণো। রেল সূত্রে খবর, মালদা থেকে অসমের কামাখ্যা পর্যন্ত চার লাইনের রেল ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। নিউ মাল থেকে বিহারের যোগবাণী পর্যন্ত ডাবল লাইন করা হবে। বর্তমানে সিঙ্গল রুট রয়েছে রুটটিতে। এর ফলে মূলত ডুয়ার্সের রেল যোগাযোগ আরও ভালো হবে বলে আশাবাদী স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটকরা।
বিশ্বমানের গড়ে তোলা হচ্ছে নিউ জলপাইগুড়ি জংশন। উত্তরবঙ্গের একাধিক স্টেশনেও চলছে সংস্কার। পাশাপাশি পরিকাঠামো উন্নয়নে নজর দিতে চাইছে রেল। যে কারণেই মালদার কুমেদপুর থেকে অসমের কামাখ্যা পর্যন্ত নতুন ডাবল লাইন তৈরির সিদ্ধান্ত। দুটি পর্যায়ে এই কাজ হবে। প্রথম পর্যায়ে কাজ হবে কুমেদপুর থেকে এনজেপি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে এনজেপি থেকে কামাখ্যা পর্যন্ত রেললাইন পাতা হবে। বর্তমানে এই রুটটিতে রয়েছে ডাবল লাইন। পাশাপাশি নিউ মাল থেকে নেপালের বিরাটনগর সংলগ্ন বিহারের যোগবাণী পর্যন্ত প্রায় ২৩২ কিলোমিটার নতুন সিঙ্গল লাইন পাততে চাইছে রেল। এই প্রকল্পে এখন ফাইনাল লোকেশন সার্ভের কাজ চলছে। এখনও মেলেনি পরিবেশমন্ত্রকের ছাড়পত্র। তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, রেলের পরিকল্পনার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে জমি প্রয়োজন, তা কি মিলবে? এমন সমস্যা যে হতে পারে, তা বুঝতে পেরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সাহায্য চেয়েছেন রেলমন্ত্রী। হাওড়ার তৃণমূল সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে সাঁতরাগাছিতে দাঁড়িয়ে এদিন রেলমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে রেলের কাজে সরকার সহযোগিতা করুক। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিন।’ প্রতিউত্তরে প্রসূন বলেন, ‘বছরের পর বছর বাকসারা এলাকায় রেলের আন্ডারপাস তৈরির আবেদন করেও রেলমন্ত্রকের থেকে কোনও সাড়া মেলেনি। মুখ্যমন্ত্রী নিজে একসময় রেলমন্ত্রী ছিলেন। তাই সবটাই তিনি জানেন। রেলমন্ত্রীই রাজনীতি করছেন।’
এদিন জাতীয় গ্রন্থাগারের অনুষ্ঠানে জলপাইগুড়িতে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থায়ীভাবে তৈরির আশ্বাসও দিয়েছেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল। সম্মেলনে ছিলেন উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ব্যবসায়ীরা। ক্ষুদ্রশিল্পের পাশাপাশি ভারী শিল্পের বিস্তার ঘটাতে শিলিগুড়ি, আলিপুরদুয়ার সহ উত্তরের জেলাগুলির ব্যবসায়ীরা এদিন রেলমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর হাতে দাবিপত্র তুলে দিয়েছেন। সেখানে আন্তর্জাতিক ট্যাক্স ট্রাইবিউনাল (আইটিটি) পার্কের পাশাপাশি রেলওয়ে কোচ ও ওয়াগন তৈরির কারখানা স্থাপন এবং ভারী শিল্পকারখানা তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা। সেই প্রস্তাবে মান্যতা দিয়ে অর্জুনের আশ্বাস, ‘আইটিটি পার্ক শীঘ্রই তৈরির পরিকল্পনা শুরু করব। কিছু অভ্যন্তরীণ সমস্যার জন্য হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের কাজ আটকে রয়েছে। সেটা মিটলেই স্থায়ীভাবে কাজ শুরু হবে।’ উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ী নবীনকুমার আগরওয়ালের বক্তব্য, ‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা আমাদের দুটি দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে দিয়েছেন। আমরা উত্তরবঙ্গের ব্যবসাকে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে দিতে চাই। আশা করব প্রত্যেকটি দাবি পূর্ণতা পাবে।’
রাজ্যে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা রেলের বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ হবে বলে আশ্বাস দিয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, শতাধিক রেলস্টেশনের আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে। হাওড়া ও শিয়ালদা করিডরকে আন্তর্জাতিক মানের কার্গো টার্মিনাল করার বার্তাও দিয়েছেন তিনি। রেললাইনের প্রতিবন্ধকতা শনাক্ত করতে অত্যাধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত নজরদারি ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাবও রেলমন্ত্রীকে দেওয়া হয় কলকাতার তরফে। এখানকার ব্যবসায়ী রাজীব রায় বলেন, ‘প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে খুব সহজেই রেললাইনে গাছ, পাথর, মানুষ সহ অন্য প্রতিবন্ধকতা শনাক্ত করা সম্ভব হবে।