চণ্ডীগড়: বারবার অমৃতসর বিমানবন্দরে অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের নিয়ে মার্কিন বায়ুসেনার বিমান অবতরণের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান। তাঁর অভিযোগ, এই বিমানগুলি অবতরণের জন্য অমৃতসরকে বেছে নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে পঞ্জাবকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে। মুখ্যমন্ত্রীর সুরে কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করেছে কংগ্রেসও। যদিও পঞ্জাব সরকারের অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছে বিজেপি। মান সরকার অহেতুক তিলকে তাল করছে বলেও তোপ দেগেছে গেরুয়া শিবির।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরেছেন শুক্রবার রাতে। তিনি ফিরতেই অবৈধভাবে সেদেশে ঢুকে পড়া ১১৯ জন ভারতীয় অভিবাসীদের নিয়ে দ্বিতীয় বিমানটি শনিবার রাত ১০টায় অমৃতসর বিমানবন্দরে নামে। তাতে পঞ্জাবের ৬৭ জন, হরিয়ানার ৩৩ জন, গুজরাটের ৮ জন, উত্তরপ্রদেশের ৩ জন, গোয়া, মহারাষ্ট্র ও রাজস্থানের ২ জন করে এবং হিমাচলপ্রদেশ ও জম্মু ও কাশ্মীরের ১ জন করে বাসিন্দা রয়েছেন। তৃতীয় বিমানটি নামার কথা রবিবার। এর আগে ১০৪ জন অভিবাসীর পায়ে শিকল এবং হাতে হাতকড়া পরিয়ে এদেশে ফেরত পাঠিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে তখন থেকেই সরব বিরোধী শিবির। এবার নয়াদিল্লির বদলে কেন অমৃতসর বিমানবন্দরে মার্কিন বিমান নামছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী।
মান বলেন, ‘কীসের ভিত্তিতে ওই বিমানটির অবতরণের জন্য অমৃতসর বিমানবন্দরকে বেছে নেওয়া হয়েছে সেটা কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রকের বলা উচিত। আপনারা পঞ্জাবকে কলঙ্কিত করার জন্যই অমৃতসরকে বেছে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন বৈঠক করছিলেন তখন আমেরিকার সরকার হয়তো আমাদের লোকজনের পায়ে শিকল বাঁধছিল। ট্রাম্প কি এই উপহারটি দিয়েছেন।’ মানের তোপ, বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার সবসময় পঞ্জাবের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করে। পঞ্জাবের সম্মানহানি করার কোনও সুযোগই তারা ছাড়তে চায় না। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তারা পঞ্জাব এবং পঞ্জাবিদের কলঙ্কিত করছে। পঞ্জাবের প্রধান বিরোধী কংগ্রেসের নেতারাও এই ইস্যুতে মানের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কংগ্রেসের সাংসদ মণীশ তিওয়ারি বলেন, ‘এই বিমানগুলি পঞ্জাবে অবতরণ করবে কেন? কেন্দ্র এই বার্তা দিতে চাইছে যে অবৈধ অভিবাসীদের সকলেই পঞ্জাবের বাসিন্দা। গুজরাট, হরিয়ানার লোকও তো রয়েছেন। ওই বিমানগুলিকে চাইলে দিল্লি বা অন্যত্র অবতরণ করানোই যেত।’ দিল্লি পঞ্জাবকে হেনস্থা করতে চাইছে বলেও তোপ দাগেন তিনি। কংগ্রেস বিধায়ক পরগত সিংও কেন্দ্রের আচরণের নিন্দা করেছেন।
যদিও বিজেপি এই সিদ্ধান্তের মধ্যে কোনও ভুল দেখছে না। পঞ্জাব বিজেপির সভাপতি সুনীল জাখর বলেন, ‘বিরোধীরা অহেতুক তিলকে তাল বানাচ্ছে। অমৃতসরে বিমান অবতরণ করাটা বড় কথা নয়। কীভাবে ওই অনুপ্রবেশকারীরা বেআইনি পথ ধরে মার্কিন মুলুকে পৌঁছোলেন সেটা নিয়ে আত্মসমীক্ষার প্রয়োজন। এটা মানবিক ইস্যু।’ গেরুয়া শিবিরের বিধায়ক মনজিন্দর সিং সিরসা বলেন, ‘আপ সরকার পঞ্জাবকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সেখানকার তরুণরা জমি বেচে আমেরিকা যেতে চাইছেন। ট্রাভেল এজেন্টরা তাঁদের লুটছে। হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন। আপ নাটক করছে।’ এদিকে মানবপাচার রুখতে পঞ্জাব সরকার গত সপ্তাহে একটি চার সদস্যের সিট গঠন করেছে।