উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল আগেই। তারপরেও রাশিয়ার থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখায় ভারতের উপর আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)। ফলে শুল্কের পরিমাণ বেড়ে ৫০ শতাংশ হয়েছে (India-US Tariff Conflict)। ভারতীয় পণ্যের উপর এই ৫০ শতাংশ মার্কিন শুল্ক ভারতীয় সময় বুধবার সকাল থেকেই কার্যকর হয়েছে। আর এর জেরে সমস্যায় পড়বে বেশ কিছু ভারতীয় পণ্যের বাজার। সরকারিভাবে অনুমান করা হচ্ছে, মার্কিন শুল্কের প্রভাব ৪৮.২ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির উপর পড়বে।
ট্রাম্পের এই ৫০ শতাংশ মার্কিন শুল্কের জেরে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে বস্ত্র ও পোশাক, রত্ন ও গয়না, সামুদ্রিক খাবার, রাসায়নিক এবং গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরির ক্ষেত্রগুলি। ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনের সভাপতি এসসি রালহান বলেছেন, ‘বিপুল পরিমাণ এই শুল্কের জেরে তিরুপুর, নয়ডা, সুরাটের বস্ত্র উৎপাদন সংস্থাগুলি তাদের উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ অধিক শুল্কের জেরে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশের মতো প্রতিযোগিদের তুলনায় অনেকখানি পিছিয়ে পড়েছে তারা।’
মূলত আমেরিকা হল ভারতের বস্ত্র ও পোশাকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। যার রপ্তানি বছরে ১০.৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। শুধুমাত্র পোশাক থেকেই আমেরিকায় ৫.৪ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হয়। আর এই খাতেই শুল্ক ১৩.৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৩.৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ফলে বস্ত্র ও পোশাকের ক্ষেত্র যে ক্ষতিগ্রস্ত তা কার্যত স্পষ্ট। সেই সঙ্গে ক্ষতির মুখে ভারত থেকে আমেরিকায় চিংড়ি রপ্তানিও। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ২.৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের চিংড়ি রপ্তানি করা হয়েছিল। এই খাতে মোট শুল্ক ৬০ শতাংশে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে অন্ধ্রপ্রদেশ, বিশাখাপত্তনমে চিংড়ি প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রগুলির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। হীরে, সোনার গয়না ও মূল্যবান পাথরের উপর ৫২.১ শতাংশ শুল্ক চাপানো হচ্ছে। ফলে সুরাট, মুম্বই, জয়পুরে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকেরই কাজ হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।
এসবের পাশাপাশি কার্পেট শিল্পে চাপানো হয়েছে ৫২.৯ শতাংশ শুল্ক। যা আগে ছিল ২.৯ শতাংশ। রপ্তানিও। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে এই খাতে আমেরিকায় ১.২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি ছিল ভারতের। চামড়াজাত পণ্যও ৫০ শতাংশ শুল্কের আওতায় পড়েছে। গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশে উপর ২৬ শতাংশ ও আসবাবের উপর ৫২.৩ শতাংশ শুল্ক চাপানো হয়েছে। ভারত ৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বাসমতি চাল, চা, মশলা এবং অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি করে আমেরিকায়। সেসবের উপরেও এখন থেকে সম্পূর্ণ ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে চলেছে ভারতের কৃষিজাত পণ্যের বাজার।
তবে ট্রাম্পের শুল্কের কোপ থেকে ছাড় পেয়েছে কয়েকটি ক্ষেত্র। যেমন আমেরিকায় ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রে কোনও শুল্ক ধার্য করা হয়নি। গত অর্থবর্ষে আমেরিকায় ৯.৮ বিলিয়ন ডলারের ওষুধ বিক্রি করা হয়েছিল। ভারত থেকে সমস্ত অব্যাহতিপ্রাপ্ত রপ্তানির ৫৬ শতাংশের মধ্যে রয়েছে এই ক্ষেত্র। সেই সঙ্গে স্মার্টফোন, সুইচিং এবং রাউটিং গিয়ার, ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট, আনমাউন্টেড চিপস, সলিড-স্টেট স্টোরেজ ডিভাইস সহ ইলেকট্রনিক্সগুলিকেও ছাড় দেওয়া হয়েছে।