নিজস্ব সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি: দীর্ঘ সীমান্ত উত্তেজনা ও কূটনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে এবার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতির পথে আরও একধাপ এগোল ভারত ও চিন (India-China)। দু’দেশ সম্মত হয়েছে চলতি বছরের মধ্যেই সরাসরি বিমান পরিষেবা ফের চালুর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার বিষয়ে। ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রি এবং চিনের উপ-বিদেশমন্ত্রী সান ওয়েইডংয়ের মধ্যে বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষের পর থেকে কার্যত জমে থাকা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। গত অক্টোবরে হিমালয়ের সীমান্তবর্তী এলাকায় যৌথভাবে টহলদারি নিয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছোয় দুই দেশ, যা সম্পর্কের বরফ গলাতে সহায়ক হয়েছিল। এবারের আলোচনাও সেই প্রেক্ষিতেই বহমান।
চিনের বিদেশমন্ত্রকের বিবৃতি অনুযায়ী,‘দু’পক্ষকেই পারস্পরিক মতপার্থক্য ও বিতর্কের যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শান্তিরক্ষায় গঠনমূলক ভূমিকা নিতে হবে।’
ভারতের বিদেশমন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বিদেশসচিব নতুন এয়ার সার্ভিস চুক্তির দ্রুত চূড়ান্তকরণের পক্ষে মত দিয়েছেন। পাশাপাশি ভিসা প্রক্রিয়ার সহজীকরণ এবং মিডিয়া ও চিন্তানিয়ন্তা (থিংকট্যাংক) পর্যায়ে বিনিময় বাড়ানোর দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’
উল্লেখযোগ্যভাবে, দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ইস্যুতে নিয়মিত কার্যকরী সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে এই বৈঠকে।
এদিকে চিন সরকারের সহায়তায় পাঁচ বছর পর এই মাসেই পুনরায় চালু হচ্ছে কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা। প্রথম দফায় ৭৫০ জন তীর্থযাত্রী যাত্রার জন্য প্রস্তুত।
বৈঠকে বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রি চিনকে ধন্যবাদ জানান এই সহযোগিতার জন্য। এবং সীমান্ত নদীগুলিকে কেন্দ্র করে তথ্য ও সহযোগিতা বিনিময়ে এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের আলোচনার কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
দু’দেশ সম্মত হয়েছে যে, ভারত-চিনের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৭৫ বছর পূর্তিকে কেন্দ্র করে যেসব যৌথ কার্যক্রম পরিকল্পিত রয়েছে, তা সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য সহযোগিতা জারি থাকবে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষের পর দীর্ঘদিন ধরে থমকেছিল ভারত-চিন কূটনৈতিক সম্পর্ক। সেইসময় থেকে বাণিজ্য, প্রযুক্তি এমনকি সরাসরি বিমান চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। তবে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বিদেশেসচিব বিক্রম মিস্রির বেজিং সফরের পর থেকেই পরিস্থিতির উন্নতি লক্ষ করা যায়। সর্বশেষ বৈঠকে দুই দেশই স্পষ্টভাবে ‘জনভিত্তিক সম্পর্কের উন্নয়নে অগ্রাধিকার দেওয়ার’ বার্তা দিয়েছে।