India-Bangladesh | বিপাকে বাংলাদেশ, বাণিজ্যে বিধিনিষেধে কর্মচ্যূতির শঙ্কা

India-Bangladesh | বিপাকে বাংলাদেশ, বাণিজ্যে বিধিনিষেধে কর্মচ্যূতির শঙ্কা

আন্তর্জাতিক INTERNATIONAL
Spread the love


উত্তরবঙ্গ ব্যুরো: একদিনেই হাহাকার অধিকাংশ স্থলবন্দরে। ভারত ও বাংলাদেশ- উভয় দিকেই (India-Bangladesh)। শিলিগুড়ির কাছে ফুলবাড়ি দিয়ে রবিবার ভারতে এসেছে মাত্র ২০টি পণ্যবাহী ট্রাক। যেখানে অন্য সময় গড়ে অন্তত ৫০টি ট্রাক আসে রোজ। কোচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা দিয়ে এসেছে মাত্র ৪৩টি ট্রাক। অথচ শনিবারও এসেছিল ৯৬টি ট্রাক। মালদার মহদিপুর সীমান্ত অবশ্য খাঁখাঁ করেছে রবিবার। ওপার থেকে মাল বহনকারী একটি ট্রাকও আসেনি।

মহদিপুরে আমদানি ব্যবসায় জড়িত রূপকুমার সাহা আক্ষেপ করলেন, ‘আসবে কী করে! যে পণ্যগুলির আমদানিতে ভারত সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি, সেগুলি মহদিপুর স্থলসীমান্ত দিয়ে আসেই না।’ শনিবার কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রকের নিষেধাজ্ঞায় শুধু ছাড় দেওয়া হয়েছে মাছ, ভোজ্য তেল, তরল পেট্রোলিয়াম পণ্য, কুচি পাথর ইত্যাদি।

ওইসব পণ্যই শুধু ফুলবাড়ি ও চ্যাংরাবান্ধা দিয়ে উত্তরবঙ্গে এসেছে আজ। এতে দু’দেশেই বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্তদের অনিশ্চয়তার কালো মেঘ গ্রাস করেছে। ‘দেশের নিরাপত্তা সবার আগে’ বললেন বটে চ্যাংরাবান্ধা এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক উত্তম সরকার, কিন্তু বিরাট আর্থিক ধাক্কার উদ্বেগ লুকোতে পারছেন না। উত্তমের কথায়, ‘দেশের স্বার্থের কারণে ভারত সরকারের সিদ্ধান্তকে আমরা সমর্থন জানাই। তবে আমদানি বাণিজ্য কম হলে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি শ্রমিকরা কিছুটা ক্ষতির মুখে তো পড়বেনই।’

স্থলবন্দরগুলিতে ইতিমধ্যে শ্রমিক সংগঠনগুলির মাথায় হাত পড়েছে। এই বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল যে অনেক শ্রমিক পরিবার। আইএনটিইউসি’র মেখলিগঞ্জ ব্লক সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, ‘নিরাপত্তা দেখতে গিয়ে শ্রমিকদের পেটের দিকে না তাকালে তো চলবে না। শ্রমিক পরিবারগুলোর রুজিরুটি এভাবেই চলে।’ তাঁর হিসেবে শুধু চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দরের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ৫ হাজার মানুষ।

ভারত সরকার বাংলাদেশ থেকে সড়কপথে রেডিমেড পোশাক, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, বিভিন্ন মুখরোচক খাবার, চিপস, তুলা, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব, মিষ্টান্ন দ্রব্য ইত্যাদি আমদানি নিষিদ্ধ করেছে শনিবার রাতে। হতাশ মহদিপুরের আমদানি ব্যবসায়ী রূপকুমার সাহা বললেন, দু’দেশের তিক্ত সম্পর্কের প্রভাব কবে যে গলবে!

মালদা মহদিপুর এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রসেনজিৎ ঘোষ জানান, ওই স্থলবন্দর দিয়ে মূলত প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ লরি পাট আসে। তাতে মাসে বাণিজ্য হত ৫০ কোটি টাকারও বেশি। এছাড়া মশারি, বস্ত্র, অন্যান্য পণ্যের আমদানিতে মাসে সবমিলিয়ে ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। বাণিজ্যমন্ত্রকের নির্দেশে তাতে বিরাট ধাক্কা লেগেছে।

ধাক্কা সীমান্তের ওপারেও। প্লাস্টিকের দানা নিয়ে ফুলবাড়ি সীমান্ত দিয়ে এপারে এসে ট্রাকচালক মহম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের মাল নিয়ে ১০০টির বেশি ট্রাক বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা সীমান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আদৌ ঢুকতে পারবে কি না জানি না।’ আরেক বাংলাদেশি ট্রাকচালক ওমর ফারুক দেশে ফেরার আগে রবিবার বলেন, ‘ভারত আমদানি বন্ধ করায় আমাদের দেশের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব পড়বে।’

বাণিজ্য সম্পর্কিত নয়দিল্লির গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের প্রকাশিত রবিবারের রিপোর্টে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য এতে ৪২ শতাংশ কমে যায়। অর্থমূল্যে যে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭৭০ মিলিয়ন ডলার। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী সবচেয়ে বড় আঘাত আসবে বস্ত্রশিল্পে।

যেমন ওমর ফারুকের কথায়, ‘অনেক মানুষ এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। গাড়ি চালাতে না পারলে আমার আয় বন্ধ হয়ে যাবে। আমার মতো অনেক পঞ্চগড় ও বাংলাবান্ধা সীমান্ত লাগোয়া চালকদের কাজ চলে গেল। একটা ট্রাকের ওপর অন্তত দশজন মানুষের পরিবার চলে। গাড়ি না চললে মাল তোলা ও নামানোর শ্রমিকরা কাজ হারাবেন।’

চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দরের শ্রমিক সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আজকেই কাজ পাইনি। দশজনের পরিবার কী করে চলবে জানি না।’ বাংলাদেশ থেকে কাটা কাপড় নিয়ে চ্যাংরাবান্ধা হয়ে এপারে এসেছেন বুড়িমারির ট্রাকচালক মহম্মদ সাজু হোসেন। তাঁর বক্তব্য, ‘খুব দুশ্চিন্তায় রয়েছি। ট্রাক চালিয়ে দিন গুজরান হয়। আমাদের ওদিকের প্রচুর শ্রমিক ও ট্রাকচালক এই ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল। কমপক্ষে পাঁচ শতাধিক মানুষের পরিবার চলে এর ওপর। আমাদের এখন কী করে চলবে, কিছুই বুঝতে পারছি না।’

আরেক বাংলাদেশি ট্রাকচালক আবদুল হানিফার চ্যাংরাবান্ধায় রবিবার বলেন, ‘এই কাজ ছাড়া আর কিছু জানি না। প্রত্যেক ট্রিপে হাজার থেকে ১১০০ টাকা পাই। রাতে ভারতে থাকতে হলে আরও ২০০ টাকা এক্সট্রা পাওয়া যায়। সব বন্ধ হয়ে যাবে।’ তাঁর কথায়, ‘ভারত সরকারের এই পদক্ষেপে ভারতের ক্ষতি কিছু হবে, কিন্তু বেশি লোকসান হবে বাংলাদেশের।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *