অর্ণব চক্রবর্তী, ফরাক্কা : সংঘাতের আবহের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাসের ইঙ্গিত। ফরাক্কায় যে জোর করে গঙ্গার জল আটকে রাখা হয় না, মেনে নিল বাংলাদেশ। গঙ্গার জলচুক্তি পর্যালোচনায় সে দেশের প্রতিনিধিদল এখন ভারতে। গঙ্গার জল বণ্টনে দু’দেশের মধ্যে ৩০ বছরের চুক্তি আছে। কিন্তু প্রায় প্রতি বছর গরম পড়লেই ঢাকা অভিযোগ তোলে চুক্তি অনুযায়ী জল ছাড়া হচ্ছে না ফরাক্কা ব্যারেজ থেকে।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ নিয়ে অসন্তোষ দেখা যায় মাঝে মাঝে। বিষয়টি সেদেশের নির্বাচনি প্রচারেও স্থান পায়। কিন্তু এই প্রথম বাংলাদেশ স্বীকার করে নিল, প্রাকৃতিক কারণে প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে গঙ্গার জল কমে যায়। ইন্দো-বাংলাদেশ জয়েন্ট রিভার কমিশনের বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের প্রধান মহম্মদ আবুল হোসেন মঙ্গলবার মেনে নিলেন, প্রাকৃতিক কারণেই জল কমছে পদ্মায়।
বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা মঙ্গলবার ফরাক্কা ব্যারেজে এসে গঙ্গা থেকে পদ্মায় জলপ্রবাহের পরিমাণ ও অবস্থা খতিয়ে দেখেন। কোন প্রক্রিয়ায় গঙ্গা থেকে পদ্মায় জল যায়, তাও পর্যালোচনা করেন। পরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের প্রধান আবুল হোসেন বলেন, ‘গঙ্গায় যতটা জল আছে, তা বাংলাদেশের দিকে যাচ্ছে। ফিডার ক্যানালের জল কলকাতায় যায়। ফরাক্কায় জলের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে জল ভাগাভাগি হয়। আমরা দেখলাম, চুক্তির সঠিক বাস্তবায়ন হচ্ছে।’
তিনি জানান, ‘জানুয়ারি মাসে জলপ্রবাহ ভালো ছিল। ফেব্রুয়ারিতে কমেছে।’ যা পুরোপুরি প্রাকৃতিক কারণে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আবুল বলেন, ‘গত বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় জলপ্রবাহ কম ছিল। তাতে জল কম পাওয়াই স্বাভাবিক।’ ফরাক্কা ব্যারেজ প্রোজেক্টের জেনারেল ম্যানেজার আরডি দেশপান্ডে জানান, ‘আজকের হিসেবে গঙ্গায় প্রায় ৬৮ হাজার কিউসেক জল রয়েছে, যা গত বছর প্রায় একই ছিল।’
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে এখনকার কাদা ছোড়াছুড়ির পরিপ্রেক্ষিতে দু’দেশের এমন অবস্থান নিঃসন্দেহে স্বস্তিদায়ক। দু’দেশের যৌথ নদী কমিশনের ৮৬তম এই বৈঠক চলবে ৮ মার্চ পর্যন্ত। মঙ্গলবার ফরাক্কায় শুরু হলেও পরে বৈঠক হবে কলকাতায়। কমিশনের পরবর্তী মিটিং ঢাকাতে হওয়ার কথা। ভারত-বাংলাদেশ জলচুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছর। ওই চুক্তিতে জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত শুখা মরশুমে প্রবাহের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে জল আধাআধি করে ১৫ দিন অন্তর দু’দেশের পাওয়ার কথা।
৩০ বছরের জলচুক্তি হলেও দু’দেশের মধ্যে চাপানউতোর প্রথম থেকে ছিল। আবুলের বক্তব্যে সেই কাজিয়ায় জল পড়বে বলে মনে করছে। ফরাক্কায় এদিন বাংলাদেশের ৭ জনের সঙ্গে ওই কমিশনে ভারতের ৭ জন প্রতিনিধি ছিলেন। সোমবার বিকেলে তাঁরা ফরাক্কায় আসেন। ভারতের তরফে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কমিশনার (ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট) শারদ চন্দ্র।
ফরাক্কা ব্যারেজ প্রোজেক্টের জেনারেল ম্যানেজার জানান, ‘এমনিতে সারা বছর বাংলাদেশের টিম এখানে থাকে। বছরে একবার হাই লেভেল মিটিং হয়। চুক্তি অনুযায়ী কাজ খতিয়ে দেখতে এটা রুটিন ভিজিটের মধ্যে পড়ে।’