বিধান ঘোষ, হিলি: হিলি সীমান্তে কড়া নজরদারিতে বারবার ধরা পড়ে যাচ্ছে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা। সম্প্রতি অনুপ্রবেশের সময় সীমান্তরক্ষীদের হাতে ধরা পড়েন অনেকেই। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই গোয়েন্দারা জানতে পারেন এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। তদন্তে হদিস মিলেছে একাধিক চক্রের। ছোট ছোট সিন্ডিকেট গড়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের কারবারের রমরমা। বিপুল পরিমাণ টাকার বিনিময়ে ভারতীয় নথি তৈরি থেকে গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত প্যাকেজ তৈরি করেছে চক্রের পান্ডারা।
একের পর এক বাংলাদেশি গ্রেপ্তারের ঘটনায় যেমন বিএসএফ, পুলিশ সাফল্য পেয়েছে, তেমনই সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশের কারবারের তালিকা বৃদ্ধি হতেই দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে গোয়েন্দাদের। সীমান্তের সুরক্ষা নিয়েও সিঁদুরে মেঘ দেখছেন পুলিশকর্তারা। সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশের কারবার বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে পুলিশ।
১৪ জানুয়ারি হিলি থানার চকগোপাল বিওপির সীমান্ত এলাকা থেকে অবৈধ পথে অনুপ্রবেশকারী বৃহন্নলাকে আটক করে সীমান্ত রক্ষীবাহিনী৷ ঘটনার তদন্তে বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবৈধ পথে মানুষ পারাপারে যুক্ত কুশ বর্মনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারপরেই জাল আধার কার্ড তৈরির অপরাধে ডুমরণের বাসিন্দা মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধৃতের বালুপাড়া পার্কিং এলাকায় সাইবার ক্যাফের দোকান রয়েছে। তারপরেই বাংলাদেশের চাঁইয়ের খোঁজ শুরু করে পুলিশ। তারপরেই ছদ্মবেশী রানা অর্থাৎ হিলির চেকপোস্ট এলাকার বাবুপাড়ার বাসিন্দা টোটোচালক নন্দদুলাল মজুমদারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২৮ জানুয়ারি ফের চকগোপাল বিওপির সীমান্ত ফটকে দুই তরুণকে জাল আধার দেখান। নথি যাচাই প্রক্রিয়ায় সন্দেহ হতেই দুই বাংলাদেশি তরুণকে পাকড়াও করে হিলি থানার পুলিশের হাতে তুলে দেয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী। ঘটনার তদন্তে বাংলাদেশি অবৈধ অনুপ্রবেশের কারবারের মাথা তথা টোটোচালক মহম্মদ মচ্ছিরউদ্দিন মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারপরেই তদন্তে আরও গভীরে নিয়ে গিয়ে জাল আধার কার্ড তৈরির অপরাধে লালপুর গ্রামের বাসিন্দা কাজল দাসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ ধৃতের চকদাপট এলাকায় সাইবার ক্যাফের দোকান রয়েছে। এরপরেই বুধবার ডাবরা এলাকার মাছের হ্যাচারি থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি মাছের ডাক্তারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ওই ঘটনার তদন্তে হ্যাচারির কর্ণধার অমৃত দাসকে বাংলাদেশ থেকে মাছের ডাক্তারকে অবৈধ অনুপ্রবেশ করিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অপরাধে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ বাংলাদেশি ডাক্তারের আধার কার্ড ও প্যান কার্ড বাজেয়াপ্ত হতেই নথি তৈরি চক্রের খোঁজ শুরু করে পুলিশ। তদন্তে বেসরকারি ব্যাংকে অস্থায়ী আধার বিভাগের কর্মী অলোক পালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ওই তিনটি বাংলাদেশি গ্রেপ্তারির ঘটনাতেই সীমান্ত থেকে চক্রের মাথা ও আধার কার্ড তৈরির মাথাদের গ্রেপ্তার করে দুশ্চিন্তায় পড়েছে গোয়েন্দারা। তিনটি ঘটনাতেই দেখা যায় অবৈধ অনুপ্রবেশে যেমন সাহায্য করা হচ্ছে, তেমন আধার কার্ড তৈরি অনায়াসে হয়েছে। সবই হচ্ছে টাকার বিনিময়ে। প্রথম দুটি ঘটনাতে আধার কার্ড অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে জাল করা হলেও বাংলাদেশি ডাক্তারের ঘটনায় আধার ও প্যান কার্ড তৈরি করেছে অসাধু কারবারিরা। তিনটি ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই সীমান্ত সুরক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েছে পুলিশের। সীমান্তে আর কত চক্র সক্রিয় রয়েছে, তা ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের। তবে সীমান্ত সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে সক্রিয় চক্রের সন্ধানে নেমেছে পুলিশ।
হিলি থানার আইসি শীর্ষেন্দু দাস বলেন, ‘সীমান্ত সুরক্ষার সঙ্গে কোনও অপরাধ আপস করা হবে না৷ পুলিশ সজাগ দৃষ্টিতে কাজ করছে।’