বিশ্বজিৎ সরকার, হেমতাবাদ: প্রথমে ইমো, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ সহ সোশ্যাল মিডিয়ায় কল, সঙ্গে টর্চের আলো জ্বালিয়ে সিগন্যাল। এরপর বিএসএফের অলক্ষ্যে কাঁটাতার পেরিয়ে ভারতে ঢুকছে বাংলাদেশি পাচারকারী ও দুষ্কৃতীরা। হেমতাবাদে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে মাদক, গোরু পাচারকারীরা। সব মিলিয়ে গত তিন মাসে হেমতাবাদ ব্লকের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় একাধিক ঘটনা ঘটেছে।
উত্তরবঙ্গ ফ্রন্টইয়ারের বিএসএফের এক আধিকারিক জানান, কিছু পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সীমান্তের জাল কাটার ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত চলছে। বৃহস্পতিবারও সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে দিনভর বৈঠক চলে। বাংলাদেশের অস্থিরতার মধ্যেই গোরু ও মাদক পাচারকারীরা ফের সক্রিয় হওয়ার পেছনে বাংলাদেশের বিজিবির চক্রান্ত দেখছেন অনেকে। তবে পাচারকারীরা আন্তর্জাতিক পাচারচক্রের হাত থাকতে পারে বলে বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে। হেমতাবাদ থানার আইসি সুজিত লামা বলেন, দুইটি অভিযোগ খতিয়ে দেখে ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।
চলতি মাসের ৯ তারিখে ভাটোল এলাকার নোনা নদী সাঁতরে ভারতে প্রবেশ করার অভিযোগে বাংলাদেশি দুষ্কৃতী মহম্মদ তারেককে গ্রেপ্তার করে ভাটোল ফাঁড়ির পুলিশ। মার্চের ৬ তারিখে হেমতাবাদ থানার বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার মাকরহাট সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া কেটে দুটি গোরু নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে বাংলাদেশি পাচারকারীদের বিরুদ্ধে। তদন্তকারীদের অনুমান, রাতের অন্ধকারে ফের পাচারকারীদের দাপট বাড়ছে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে৷ জানা গিয়েছে, বুধবার মাঝ রাতে আচমকাই বেজে ওঠে সীমান্তের কাঁটাতারে লাগানো সাইরেন। বিএসএফ কর্মীরা ছুটে গিয়ে দেখেন কাঁটাতারের কিছু অংশ কাটা। বৃহস্পতিবার সকালে জানা যায়, সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা গণেশচন্দ্র বর্মনের দুইটি গোরু চুরি গিয়েছে। অনুমান, ওই কাঁটাতার দিয়েই চুরি করা গোরু বাংলাদেশে পাচার করা হয়েছে। গণেশ বলেন, ‘বুধবার রাতে আমার বাড়ির গোয়ালঘরের বেড়া কেটে দুইটি বলদ গোরু চুরি হয়েছে৷ প্রায় ১ লক্ষ টাকা দাম দুইটি গোরুর। এই গোরু দিয়ে লাঙল চালিয়ে সংসার চালাতাম। ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে কড়া নজরদারি থাকলেও বিএসএফ এর চোখ এড়িয়ে ফের পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে সীমান্তে। গোরু, নিষিদ্ধ কাফ সিরাপ পাচার হচ্ছে বলেই অভিযোগ। এবারে কেটে ফেলা হল সীমান্তের কাঁটাতার।
বিএসএফ-এর দাবি, ইতিমধ্যে কাঁটাতার মেরামত করা হয়েছে। ৩ জন ভারতীয় বাসিন্দা যারা সীমান্তে পাচার কাজে যুক্ত, তাদের নামে লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, মাকরহাট সীমান্ত এলাকা দিয়ে রাতের অন্ধকারে বাড়ছে পাচার কাজ। এর আগেও কাটা হয়েছিল সীমান্তের কাঁটাতার। চৈনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের স্থানীয় সদস্য দুলালচন্দ্র বর্মন বলেন, ‘বিএসএফ এর আধিকারিকরা এসে স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেছে। এলাকায় কারা পাচারের সাথে যুক্ত রয়েছে, তা খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’