নাগরাকাটাঃ জলের তোড়ে ভেসে গিয়ে মৃত্যু হল এক শিশু সহ কমপক্ষে ৫ জনের। নিখোঁজ হয়ে আছেন আরও একাধিক ব্যক্তি। ভেঙে গিয়েছে ১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের ওপরের সেতুর একাংশ। ভেসে যায় প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার রাস্তা সমেত সেতু। জলমগ্ন হয়ে পড়ে কয়েকশো বাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ডায়নার বাঁধ। বহু স্থানে উপড়ে পড়ে গাছ। বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু হয় নি এদিন রাত পর্যন্ত। সব মিলিয়ে শনিবার গভীর রাত থেকে রবিবার ভোর পর্যন্ত প্রবল বর্ষণে এককথায় বিপর্যস্ত ডুয়ার্সের চা বলয়ের অন্যতম কোর এলাকা নাগরাকাটা।
জানা গিয়েছে, টানা কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় জল জমে যায় বামনডাঙ্গা চা বাগানের মডেল ভিলেজে। এই গ্রামে বাস ৫০০ পরিবারের। কোমর সমান জল জমে যাওয়ায় আতঙ্কে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে গ্রামবাসীরা। বহু মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে সক্ষম হলেও বহু মানুষ জলের তোড়ে ভেসে যায়। এই ঘটনায় কমপক্ষে ৫ জনের মৃত্যু হয়। মৃতরা প্রত্যেকেই বামনডাঙ্গা চা বাগানের মডেল ভিলেজের বাসিন্দা। নিখোঁজদেরও কয়েকজন সেখানকার বলে জানা গিয়েছে। এক মহিলার সন্ধান মিলছে না লুকসান থেকে। উদ্ধার কার্যে হাত লাগিয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, বামনডাঙ্গা চা বাগানের মডেল ভিলেজ থেকে ভেসে গিয়ে যারা মারা গিয়েছেন তাঁরা হলেন যথাক্রমে শানচারোয়া সাউ(৬৫), কস্তু লোহার(৩০), রাধিকা লোহার(২৫), শিল্পা মুন্ডা (২৫) ও আলিশা নাগাসিয়া নামে এক মহিলার দুই মাসের শিশুকন্যা। মায়ের কোল থেকে ওই শিশুটি জলে পড়ে যায়। মৃতদের মধ্যে কস্তু ও রাধিকা দম্পতি। সেখানকার আরও কয়েকজন নিখোঁজ হয়ে আছেন বলে জানা গিয়েছে।
নাগরাকাটার বিপর্যয়ের রূপ দেখে ১৯৬৮ সালের ৪ অক্টোবরের দিনই তিস্তার আগ্রাসনে জলপাইগুড়ি শহরে যে ভয়াবহ কাণ্ড ঘটেছিল তারই মিনি সংস্করণ বলছেন অনেকে। নাগরাকাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সঞ্জয় কুজুর বলেন, “অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। পরিবারগুলির পাশে আমরা রয়েছি। যে ক্ষয়ক্ষতি নাগরাকাটা ব্লকে হল সেব্যাপারে প্রশাসনের শীর্ষ মহলে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বামনডাঙ্গা চা বাগানের মডেল ভিলেজ ছাড়াও চা বাগানের ১৮ নম্বর লাইন, বিচ লাইন ও হাতি লাইন এর মত শ্রমিক মহল্লাগুলিতে এদিন জল ঢুকে যায়। সব মিলিয়ে অন্তত ৫০০ টি পরিবার দুর্ভোগের শিকার। তাঁদেরকে বাগানের ফ্যাক্টরিতে নিয়ে এসে রাখা হয়েছে। এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য লক্ষণ কাওয়ার বলেন, ‘গোটা এলাকা জুড়ে এখন শুধুই শোকের ছায়া’।