সৌরভকুমার মিশ্র, হরিশ্চন্দ্রপুর: প্রায়ই মাঝরাতে পুলিশ এসে দরজায় টোকা দিত। পরিচয়পত্র খতিয়ে দেখে নাম লিখে নিয়ে যেত। কখনও বা বাজেভাবে কথাও বলত। ওদের সন্দেহ, আমরা বাংলায় কথা বলি বলে আমরা বাংলাদেশি। এমনটাই শোনালেন সদ্য ওডিশা থেকে পালিয়ে আসা হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকের (Harishchandrapur) তালগাছি গ্রামের আফজাল হোসেন। তাঁর চোখেমুখে এখনও আতঙ্কের ছাপ।
এদিকে, আটকের পাঁচদিন হয়ে গেলেও এখনও ছাড়া পাননি বাংলাদেশি সন্দেহে ওড়িশার কটকে আটক মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের ১৯ জন পরিযায়ী শ্রমিক। শুক্রবার অন্য একটি থানায় আটক একজন ছাড়া পেলেও বাকি ১৯ শ্রমিক ছাড়া না পাওয়ায় উদ্বিগ্ন তাঁদের পরিজনরা। এছাড়া ঘটনার জেরে উদ্বেগে ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সেখানে থাকা হরিশ্চন্দ্রপুরের শতাধিক শ্রমিক। উদ্বিগ্ন তাঁদের পরিজনরাও। যদিও আটক শ্রমিকদের ছাড়াতে সবরকম চেষ্টা চলছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।
আফজালের কথায়, ‘পরিযায়ী শ্রমিকের কাজে যাওয়া আমরা কটকে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতাম। গত মঙ্গলবার রাতে পুলিশের একটি দল এসেছিল। সঙ্গে তিনটি গাড়ি। আমাদের ঘরের দরজায় টোকা দিলে দরজা খুলি। আমাদের সমস্ত কাগজপত্র খুঁটিয়ে দেখে নামধাম লিখে নিল। পরের দিন সকালে আমাদের ৬০-৭০ জনকে কিছু কাজ আছে বলে থানায় নিয়ে যায়। ব্যাপারটা আমার গোলমেলে লাগায় আমি আর দেরি করিনি। হাতের কাছে যা কিছু ছিল সব নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিই।’
আফজাল পরে জানতে পারেন, তাঁর গ্রামেরই ১৯ জনকে সেখানকার মাহাঙ্গা থানায় বাংলাদেশি সন্দেহে আটকে রাখা হয়েছে। আফজাল বলেন, ‘সঠিক কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত হয়ে যাচ্ছি বাংলায় কথা বলার কারণে। আর বাইরে না গেলে খাব কী?’ আটক ১৯ শ্রমিকের মধ্যে ১৫ জন তালগাছি এলাকার। বাকিরা লাগোয়া মোহনপুর, ভৈরবপুরের। তালগাছির আটক শ্রমিক জিয়াউল হকের বাবা হজরত আলি বলেন, ‘সমস্ত নথি দেখানোর পরেও ছেলে ছাড়া পায়নি। আতঙ্কে, উদ্বেগে আমাদের রাতের ঘুম উবে গিয়েছে।’
হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকের বিডিও তাপসকুমার পালের আশ্বাস, ‘প্রশাসন ওঁদের পাশে রয়েছে। শ্রমিকদের পরিজনদের সঙ্গে দেখা করেছি। প্রশাসনের উচ্চস্তরে সবরকম চেষ্টা চলছে। আশা করছি শীঘ্রই ওই শ্রমিকরা ছাড়া পাবেন।’