হরিশ্চন্দ্রপুরঃ ছাব্বিশেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। আর তার আগে তৃণমূলের এবারই শেষ একুশে জুলাই। একুশে জুলাই সমাবেশ সফল করতে ইতিমধ্যেই জেলায় জেলায় শুরু হয়ে গিয়েছে প্রস্তুতি সভা। দলের সুপ্রিমোর গুডবুকে থাকার জন্য আয়োজনের খামতি রাখছেন না দলের ছোট বড় নেতারা। বিধানসভাগতভাবে প্রস্তুতি মিটিং শুরু করে দিয়েছেন তারা। আর এই প্রস্তুতি সভা চালাকালীন পরস্পরের বিরুদ্ধে বচসায় জড়িয়ে পড়লেন রাজ্যের মন্ত্রী তাজমুল হোসেন ও মালদা জেলা পরিষদের সদস্য বুলবুল খানের অনুগামীরা। যা নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলে।
জানা গিয়েছে, সোমবার হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভায় এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী তাজমুল হোসেনের নেতৃত্বে হরিশ্চন্দ্রপুর দু নম্বর ব্লক কমিউনিটি হলে একটি প্রস্তুতি সভার আয়োজন করা হয়। এ সভায় মন্ত্রী ছাড়া উপস্থিত ছিলেন হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভার দুটি ব্লকের ব্লক সভাপতি মর্জিনা খাতুন, তবারক হোসেন, জিয়াউর রহমান, জেলা পরিষদ সদস্য বুলবুল খান, কিষাণ ক্ষেতমজুর সংগঠনের জেলা সাধারণ সম্পাদক সামিউর রহমান অন্যান্য নেতৃত্বরা। এই সভা থেকে তজমুল হোসেন এবং তার বিরোধীগোষ্ঠী বুলবুল খানের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশে চলে আসে। এদিনের এই সভার শেষে মন্ত্রী তাজমুল হোসেন তাঁর বক্তব্যে নাম না করেই জেলা পরিষদের সদস্য বুলবুল খানকে আক্রমণ করে বসেন। সেখানে মন্ত্রী বলেন, এখন নতুন নতুন নেতা উঠে আসছে। অনেকে নিজেকে বড় নেতা ভাবছে। বড় নেতা কীভাবে জেলা পরিষদের টিকিট পেয়েছিল তা জানি। প্রথমে নাম না করলেও পরে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি বুলবুলকে ভালোবাসি। কাউকে তোয়াক্কা না করলেও বুলবুলকে করি।’
এরপরেই উত্তরে বুলবুল বলেন, ‘আমাকে দু’মিনিট বলতে দিতে হবে। আমি মন্ত্রীর উত্তরে কিছু বলতে চাই। তখন মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, মন্ত্রী তো কারও নাম করেননি। তাহলে আবার বলার কি আছে।’ এরপরেই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন বুলবুল অনুগামীরা। ভবনেই প্রবল উত্তেজনা তৈরি হয় দুই পক্ষের মধ্যে। পরবর্তীতে বাইরেও দু’পক্ষের অনুগামীরা তর্কাতর্কি ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ। এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সামাল দেন উপস্থিত তৃণমূল নেতৃত্ব।
বিধানসভা ভোটের আগে এদিনের ঘটনা নিয়ে দলের অন্দরেই চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। জেলাজুড়ে একের পর এক দলের দ্বন্দ্ব সামনে এসে পড়ায় অস্বস্তিতে পড়েছেন নেতৃত্ব। এছাড়াও সরকারি ভবনে কীভাবে তৃণমূলের সভা অনুষ্ঠিত হল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। বিডিও তাপস কুমার পাল বলেন, “আজ ছুটি। সরকারি ভবনটি বন্ধ থাকার কথা। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।”
যদিও মন্ত্রী তজমুল কে ফোন করা হলে সাফায়ের সুরে তিনি বলেন এরকম কিছুই হয়নি। যদিও সভার ভেতরে কিছু যে একটা হয়েছে তা তা বুলবুলের কথাতেই স্পষ্ট। তিনি বলেন, “গত বিধানসভায় আমিও টিকিটের দাবিদার ছিলাম। টিকিট না পেলেও মন্ত্রীর হয়ে কাজ করেছি। আমি সব থেকে বেশি লিড দিয়েছি। তারপরেও আমাকে নিয়ে মন্ত্রীর দুশ্চিন্তা কেন জানি না। আমার কাছে আগে দল। দলের প্রত্যেকটি কর্মসূচিতে আমি থাকি। আমি ব্লক কমিটিকে সভা ডাকতে বলেছি। সেখানে ব্লকের মূল দল ও শাখা সংগঠনের নেতারা থাকবেন। মন্ত্রী থাকবেন। মন্ত্রীকে আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। আর আমার ত্রুটি থাকলে রাজনিতি ছেড়ে দেব।” যদিও আজকের এই ঘটনা নিয়ে দলের ব্লক এবং জেলা নেতৃত্ব কেউ কোন মুখ খুলতে চাননি।