সৌরভ রায়, হরিরামপুর: আদালতের নির্দেশে ওলট-পালট হয়ে গিয়েছে সমস্ত হিসেবনিকেশ। কোনও স্কুলে একজন তো কোনও স্কুলে ৮ জন শিক্ষকের চাকরি চলে গিয়েছে। আর এসবের মধ্যে বেশ সমস্যায় হরিরামপুর সিএমডি বালিকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সাতজন শিক্ষক নিয়ে চলত ১৫০ পড়ুয়ার পড়াশোনা। তার মধ্যেও দুজনের চাকরি চলে গিয়েছে। চাকরি হারিয়েছেন স্বয়ং টিচার ইনচার্জ শাশ্বতী ঘোষ। এছাড়াও একজন অবসর নেবেন সেপ্টেম্বরে। সাকুল্যে বলা যায়, ‘রইল বাকি চার।’ সমস্যা এখানেই মেটেনি। প্রায় অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে বিদ্যালয়ের বাকি পড়ুয়ারা। দ্রুত টিচার ইনচার্জ নিয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ডিআই দেবাশিস সমাদ্দার। শিক্ষা দপ্তরের কর্তারা বুঝতে পারছেন টিচার ইনচার্জ না থাকলে সমস্যা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
বিদ্যালয়ের সিনিয়ার টিচার তপতী বর্মন মণ্ডল বলেন, ‘করোনার পর থেকে ছাত্রী সংখ্যা কমতে শুরু করে। একসময় সাড়ে তিনশো ছাত্রীর স্কুলে আপাতত পড়ুয়ার সংখ্যা দেড়শো জন। সাতজন শিক্ষিকা ও চারজন প্যারাটিচার নিয়ে স্কুল চলছিল। দিন দুয়েক আগে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি চলে গেছে ২০১৯ সালে বিদ্যালয়ে যোগ দেওয়া টিচার ইনচার্জ শাশ্বতী ঘোষের। একইসঙ্গে চাকরি গেছে অঙ্কের শিক্ষিকা ববিতা সুলতানার। ইতিহাস, ভূগোলের শিক্ষক আগেই ছিল না। এবার অঙ্ক এবং জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষক চলে গেল।’
শিক্ষিকা নিরোদা টুডু বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার পর আমরাই চালাচ্ছি স্কুল। নবম শ্রেণির ১১ জন, দশম শ্রেণির ২৩ জন ছাত্রীর ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে জানি না। শুরু হয়েছে প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষা। বিজ্ঞান বিভাগের প্রশ্নপত্র তৈরি, কিন্তু সেই খাতা দেখবে কে এই প্রশ্ন উঠেছে স্কুলে। এই অবস্থা চলতে থাকলে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও করছি।’
নবম শ্রেণির অঞ্জলি বেসরা বলেন, ‘সকলে টিউশনি পড়ে না। অঙ্ক এবং বিজ্ঞান পড়ানোর দিদিমণি না থাকলে কার কাছে পড়ব সেটাই এখন সবচেয়ে বড় সমস্যার।’
বিজ্ঞান ও অঙ্কের ক্লাস কীভাবে নেবেন বাংলা, ইতিহাস শিক্ষকরা এই প্রশ্ন তাঁদের নিজেদেরও। সবচেয়ে বড় সমস্যা টিচার ইনচার্জ শাশ্বতী ঘোষের চলে যাওয়া। ২০১৯ সালে তিনি হরিরামপুর সিএমডি বালিকা বিদ্যালয়ে জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর ২০২২ সালে সিনিয়ার পরিচালন কমিটির সম্মতিতে টিচার ইনচার্জের দায়িত্ব পান। তিনি বলেন, ‘নানা অসুবিধের মধ্যে দিয়েও গত মার্চ মাস পর্যন্ত ঠিকঠাক চলছিল। এপ্রিল মাস পড়তেই যেন ছন্দপতন ঘটল ধারাবাহিকতায়।’
নবম শ্রেণির সোনামণি টুডু, মালতি রায়দের কথায়, ‘পরীক্ষার জন্য স্কুলে আসছি কিন্তু মন খুব খারাপ। কারণ, হেড দিদিমণি সহ অঙ্ক দিদিমণির চাকরি চলে গিয়েছে।’ বিদ্যালয়জুড়ে শোকের আবহে সিনিয়ার টিচার তপতি বর্মন মণ্ডল আগামী সেপ্টেম্বরে অবসর নেবেন। তাঁর বক্তব্য, ‘বিদ্যালয়ে পা রাখতেই মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠছে। অযোগ্যদের জন্য কেন বঞ্চিত হতে হবে, যোগ্যদের এই প্রশ্ন আমাকেও ভাবাচ্ছে।’ প্রশ্ন উঠেছে এই সমস্যার সমাধান হবে তো আগামীদিনে? হরিরামপুর সিএমডি বালিকা বিদ্যালয়ের ভবিষ্যত কী, উত্তরটা আপাতত আগামীদিনের জন্য তোলা রইল।