স্বপনকুমার চক্রবর্তী, হবিবপুর: যাঁরা চোর ধরতে ছোটেন, তাঁরাই এখন বন্দুক রেখে চক-ডাস্টার হাতে খুদেদের পড়াচ্ছেন। সকালসকাল হবিবপুর থানায় গেলে এই ছবিটাই চোখে পড়বে। উর্দিধারীদের কেউ এখানে অঙ্কের, আবার কেউ ইংরেজির শিক্ষকের ভূমিকায়। পুলিশকর্মীদের পাশাপাশি খুদেদের পড়াতে ব্যস্ত সিভিক ভলান্টিয়াররাও। বছর দশেক ধরে এভাবেই হবিবপুর থানার বারান্দায় শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে ‘কিশলয়’ (Habibpur)।
হবিবপুর থানার আইসি শোভন কর্মকারের কথায়, ‘আমি হবিবপুর থানায় যোগদানের আগে থেকেই কিশলয় নামে এই স্কুলটি চলছে। আজকের শিশুদের সুনাগরিক গড়ার লক্ষ্যে এই স্কুল পরিচালনায় আমার সবরকম সহযোগিতা থাকবে। বাল্যবিবাহ সহ বিভিন্ন কুসংস্কারের বিরুদ্ধেও পড়ুয়াদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি আমরা। কর্মব্যস্ততার মধ্যেও সময় করে মাঝেমধ্যে পড়ুয়াদের ক্লাস নিতে গিয়ে খুব আনন্দ পাই।’
‘কিশলয়’-এর তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া জয়শ্রী মণ্ডলের কথায়, ‘আমাদের স্যররা খুব ভালো পড়ান। একদিন না এলেই বাড়িতে খোঁজ নেন।’ অমৃত নাথ নামে পঞ্চম শ্রেণির আরেক ছাত্র বলে, ‘পড়াশোনার পাশাপাশি স্যররা আমাদের ছবি আঁকাও শেখান। কুইজ করান। আমাদের খুব ভালো লাগে।’ ষষ্ঠ শ্রেণির রমিতা সিংহ বলে, ‘স্যররা আমাদের বিনা পয়সায় বই, খাতা, কলম এমনকি স্কুলের ব্যাগও দেন।’ অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী রূপা মণ্ডলের কথায়, ‘এই স্কুলে এসে স্যরদের কাছ থেকে আমরা আত্মরক্ষার কৌশলও শিখছি। কিশলয়কে কোনওদিন ভুলতে পারব না।’
থানা চত্বরে অবৈতনিক স্কুলের পড়ুয়াদের জন্য শিক্ষকদের প্রধান ভূমিকায় থাকা সিভিক ভলান্টিয়ার আস্তিক সিংহ বলেন, ‘প্রায় দশ বছর ধরে হবিবপুর থানা চত্বরে দুঃস্থ পড়ুয়াদের জন্য এই স্কুলটি চলছে। বর্তমানে প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ১৫০ পড়ুয়া আছে। এই স্কুলে শিক্ষকের ভূমিকায় আছেন আটজন সিভিক ভলান্টিয়ার। শিক্ষকের ভূমিকায় থাকা অনেক সিভিক ভলান্টিয়ারই স্নাতক, স্নাতকোত্তর এমনকি বিএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।’ আস্তিক সিংহ আরও বলেন, ‘কাজের ফাঁকে সময় করে থানার আইসি শোভন কর্মকার, এসআই জয়ন্ত মণ্ডল, এসআই মধুসূদন ভট্টাচার্য, এএসআই প্রদীপকুমার ঝা পড়ুয়াদের ক্লাস নেন। দুঃস্থ পড়ুয়াদের সবরকম সাহায্যের জন্যও হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের ছাড়া এমন উদ্যোগ সম্ভব হত না। তাঁদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’ তবে আস্তিকবাবু বলেন, ‘বর্ষাকালে হঠাৎই ঝেঁপে বৃষ্টি এলে সমস্যা হয়। তখন ছোটাছুটি করে থানার বিভিন্ন ঘরে আশ্রয় নিতে হয়। পড়ুয়াদের জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো থাকলে খুব ভালো হত।’
হবিবপুরের আকতৈল এলাকার বাসিন্দা শিক্ষারত্ন মিহির চড়ে বলেন, ‘ইচ্ছে থাকলে যে অনেক কিছু করা যায়, তা দেখিয়ে দিয়েছেন হবিবপুর থানার কয়েকজন সিভিক ভলান্টিয়ার। অবৈতনিক স্কুল কিশলয় তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’