উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: একজন সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীর আইএএস অফিসার হওয়ার স্বপ্ন পূরণের জন্য আর্থিক সহায়তার আবেদন উত্তরপ্রদেশে জন্ম দিয়েছে একটি রাজনৈতিক বিতর্কের। পঙ্খুরি ত্রিপাঠী (Pankhuri Tripathi) নামের এই ছাত্রীটির বাবা রাজীব কুমার ত্রিপাঠী একটি দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে আহত হওয়ার পর চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। যার ফলে তাঁদের পরিবার বড় ধরনের আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে। পরিবারটি মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কাছে মেয়ের স্কুলের ফি মকুবের জন্য সাহায্য চেয়েছিল। আদিত্যনাথও আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তাঁদের মেয়ের পড়াশোনায় কোনও বাধা আসবে না। কিন্তু এরপরেও নাকি ওই স্কুল কর্তৃপক্ষ মেয়েটির ফি মকুব করতে রাজি হয়নি।
সপ্তম শ্রেণির এই ছাত্রী জানিয়েছে, স্কুল কর্তৃপক্ষ তার ফি মকুব করতে রাজি হয়নি এবং বলেছে যে তাদের নাকি এমন কোনও ফি মুকুবের নিয়ম নেই। এই ঘটনায় সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকারকে নিশানা করেন এবং মেয়েটির পড়াশোনার খরচ বহন করার প্রস্তাব দেন। যদিও পঙ্খুরির পরিবার এখনও আশা করছে যে, মুখ্যমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করবেন এবং তার স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করবেন।
পঙ্খুরি ত্রিপাঠী গোরখপুরের পাক্কিবাগে সরস্বতী শিশু মন্দিরে পড়াশোনা করে। আরএসএস-এর শিক্ষা শাখা বিদ্যা ভারতী দ্বারা পরিচালিত এই স্কুলটি সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক ১,৬৫০ টাকা ফি নেয়। পঙ্খুরির প্রায় ১৮,০০০ টাকা বকেয়া রয়েছে।
এও প্রসঙ্গে পঙ্খুরি বলে, “আমি ফি মকুবের অনুরোধ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে একটি চকলেট দিয়েছিলেন এবং আশ্বাস দিয়েছিলেন যে এটি হয়ে যাবে। কিন্তু যখন আমি বাবার সঙ্গে স্কুলে গেলাম, তারা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। আমাদের বলা হয় যে, ফি মকুব করা যাবে না। তারা নাকি এও বলে, ‘যদি আরও অভিভাবক ফি মকুবের আবেদন করেন, তাহলে স্কুল চালানো সম্ভব হবে না।’
পঙ্খুরি আরও বলেন, “আমার বাবা ভেঙে পড়েছিলেন। কেউ কখনও তাঁর সঙ্গে এমনভাবে কথা বলেনি। কিন্তু আমার বিশ্বাস, মুখ্যমন্ত্রী আমার স্বপ্ন ভেঙে যেতে দেবেন না। আমি কঠোর পরিশ্রম করব এবং একজন আইএএস অফিসার হব।” প্রসঙ্গত, গোরখপুর মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের একটি শক্তিশালী ঘাঁটি। তিনি গোরক্ষনাথ মঠের প্রধান পুরোহিত। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে পাঁচবার গোরখপুরের সাংসদও নির্বাচিত হয়েছিলেন।
রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব পঙ্খুরির মন্তব্যের পর শাসক দলকে কটাক্ষ করেছেন। এক্স-এ (পূর্বে টুইটার) একটি পোস্টে তিনি বলেছেন, “আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে তার পড়াশোনা বন্ধ হবে না। এটাই বিজেপির ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ স্লোগানের মিথ্যাচার। আমরা বিজেপিকে অনুরোধ করছি শিশুদের মিথ্যা না বলতে।”
পঙ্খুরির বাবা রাজীব ত্রিপাঠী জানান, কোভিড-১৯ মহামারীর আগে তিনি রাজ্যের বাইরে কাজ করতেন। তিনি বলেন “মহামারীর সময় যখন আমি বাড়িতে ছিলাম, তখন ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে পায়ে আঘাত পাই। আমি চাকরি হারাই। আমার দুই সন্তান ইংরেজি-মাধ্যম স্কুলে পড়ে। আমার ছেলে দ্বাদশ শ্রেণিতে এবং মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের ফি দিতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল এবং ফেব্রুয়ারির পর থেকে আমার মেয়ে স্কুলে যায়নি। আমার ছেলের স্কুলের শেষ বছর, তাই আমি তার পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটাতে চাইনি। আমি ভেবেছিলাম আমার মেয়েকে এক বছরের জন্য স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নেব। তারপর মনে হল আমি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চাইতে পারি। আমরা ১ জুলাই জনতা দরবারে গিয়েছিলাম এবং তাঁর সাহায্য চেয়েছিলাম। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিলেন যাতে আমার মেয়ের পড়াশোনা বন্ধ না হয়।” তিনি আরও বলেন, “তবে স্কুল প্রশাসন জানিয়েছে, এমন কোনও বিধান নেই। তারা বলেছে, যদি প্রতিটি অভিভাবক ফি মকুব করাতে চান, তাহলে স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে। তারা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে। যখন আমি আমার মেয়েকে কাঁদতে দেখলাম, আমিও ভেঙে পড়লাম।”
অখিলেশ যাদব এই বিষয়ে টুইট করেছেন এবং সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছেন শুনে রাজীব ত্রিপাঠী বলেন, “তিনি টুইট করেছেন। কিন্তু আমরা মঠ এবং মহারাজ জি (যোগী আদিত্যনাথকে ইঙ্গিত করে)-র সঙ্গে যুক্ত এবং আমরা বিশ্বাস করি তিনি আমার মেয়ের পড়াশোনা নিশ্চিত করবেন।” যদিও এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। শিক্ষা বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার স্কুল প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছে এবং শীঘ্রই একটি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আশা করা হচ্ছে।