গাজোল: স্বামীর সঙ্গে বচসার জেরে নিজের একমাত্র পুত্র সন্তানকে খুন করে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন মা। মঙ্গলবার বিকেলে এমনই ঘটনা ঘটেছে গাজোলের আহোড়া এলাকায়। এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে গাজল থানার পুলিশ। মৃত শিশুটির দেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। মহিলার চিকিৎসা চলছে গাজোল স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। চিকিৎসাধীন ওই মহিলার নাম জনকা মণ্ডল সরকার বয়স ২২। মৃত পুত্র সন্তানের নাম গৌরব সরকার(২)।
জানা গিয়েছে, বছর তিনেক আগে আদিনা এলাকার বাসিন্দা জনকার বিয়ে হয়েছিল আহোড়া গ্রামের বাসিন্দা বিদ্যুৎ দপ্তরের অস্থায়ী কর্মী গণেশ সরকারের সঙ্গে। গত তিন দিন আগে ভাত দেওয়া নিয়ে স্বামীর সঙ্গে বচসা হয় জনকার। অভিযোগ, সেই অভিমান পুষে রেখে মঙ্গলবার বিকেলে বছর দুয়েকের একমাত্র পুত্রকে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করেন তিনি। পরে বিষপান করে, দুই হাতের ও গলার শিরা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি।
স্থানীয় এক বাসিন্দা রামানন্দ বলেন, ‘জমির কাজ সেরে বিকেলে বাড়ি ফিরে আসি। এরপরই জানতে পারি এই ঘটনা। একমাত্র ছেলেকে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করেছে মা। শুনেই আমরা ওই বাড়িতে ছুটে আসি। মৃত ওই শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন দাদু। সেই সময় ওই মহিলা বলেন তিনি বিষ খেয়েছেন। পাশাপাশি আমরা দেখতে পাই দুই হাতের শিরা এবং গলা ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলেছেন তিনি। তাকেও উদ্ধার করে আমরা হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।’
নিজের শিশুপুত্রকে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে নিয়েছেন অভিযুক্ত মা জনকা মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘দিন তিনেক আগে ভাত দিতে যাওয়ার সময় স্বামীর সঙ্গে বচসা হয়েছিল। এই সময় স্বামী আমাকে বিষ খেয়ে মরতে বলেছিল। এরপর গত তিনদিন ধরে আমি কিছু খাইনি।’
তবে নিজের ছেলেকে যে খুন করেছেন সে কথা নিজের মুখেই স্বীকার করেছেন তিনি। কিভাবে মারলেন ছেলেকে? এই প্রশ্নের উত্তরে জনকা বলেন, “বালিশ চাপা দিয়ে ছেলেকে মেরেছি। আমি নিজে পরপর দুবার বিষ খেয়েছি।”
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে মৃত শিশুর দাদু গোবিন্দ সরকার বলেন, “আমরা কেউ বাড়িতে ছিলাম না। ছেলে কাজে গিয়েছিল। আমি গিয়েছিলাম র্যাশন আনতে। বাড়িতে এসে দেখি বৌমা এবং নাতি ঘুমিয়ে আছে। এরপর আমি স্নান করতে যাই। তারপরেই জানতে পারি আমার নাতিকে মেরে ফেলা হয়েছে। বৌমা নিজের মুখে স্বীকার করেছে ছেলেকে খুন করেছে। তবুও নাতিকে নিয়ে হাসপাতালে আসি। চিকিৎসা করে বলেন মারা গেছে।” গোবিন্দ বাবু এই ঘটনার জন্য বৌমাকেই দায়ী করেছেন। বৌমা এবং তার মায়ের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানাবো।
মহিলার স্বামী গনেশ সরকারের বক্তব্য, “আমি কাজে গিয়েছিলাম। ফোনের মাধ্যমে খবর পেয়ে বাড়িতে ছুটে যাই। এরপর ছেলেকে কোলে করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। ডাক্তার বাবুরা বলেন প্রায় ঘন্টা দেড়েক আগে ছেলে মারা গেছে। তবে স্ত্রীর সঙ্গে এমন কিছু হয়নি যাতে করে এত বড় কাণ্ড ঘটে যেতে পারে।”
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে শিশু মৃত্যু এবং মহিলার আত্মহননের চেষ্টা নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। শিশু মৃত্যুর কারণ জানতে বুধবার মৃত শিশুর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হবে মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ঠিক কী কারণে এই ঘটনা ঘটল তা নিয়ে শুরু হয়েছে তদন্ত। তবে রাত পৌনে আটটা পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি।