গাজোল: মেধার কাছে হার মেনেছে আর্থিক প্রতিকূলতা। খড়গপুর আইআইটি থেকে পাশ করে বিদেশে পিএইচডি করার সুযোগ পেলেন সাধারণ এক হকারের ছেলে। হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান শিবশংকর সাহার এই কৃতিত্বে খুশি গাজোলের বাসিন্দারা। ছেলের সাফল্যে আনন্দে চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন না বাবা-মা।
গাজোলের তুলসীডাঙা এলাকার বাসিন্দা কালিপদ সাহা। বলতে গেলে একেবারে হতদরিদ্র পরিবার। তিনি জানালেন তাঁর জীবন সংগ্রামের কাহিনী। কালিপদ বাবু বলেন, ‘প্রথমে হাটে হাটে হকারি করে কোনওরকমে চলতো সংসার। এরপর এক ব্যাংক ম্যানেজারের সহায়তায় লোন নিয়ে কিনেছিলাম একটি টোটো। চরম অভাবের সঙ্গে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে ছেলেকে শিক্ষিত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছি। গাজোল হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করার পর এক বুক আশা নিয়ে ছেলে শিবশংকরকে ভর্তি করিয়েছিলাম কলকাতার যাদবপুর হাই স্কুলে। সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর ছেলে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে ভর্তি হয় বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজে। এমএসসি পাস করার পর সুযোগ পায় খড়গপুর আইআইটিতে। সেখানেই অংকের “গ্রাফ থিওরি” নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করে। এরপর পোস্ট ডক্টরেট করার জন্য সুযোগ পেয়েছে ইজরায়েলের বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই লড়াইয়ে পাশে পেয়েছি স্ত্রী রুমাকে।’
শিবশংকরের বক্তব্য, ‘মেধা থাকলে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার অনেক পথ খোলা রয়েছে। সরকারের কাছ থেকে যেমন অনুদান পাওয়া যায় তেমনি সাধারণ মানুষও সহযোগিতা করেন। প্রথম দিকে পড়াশোনার খরচ যোগাতে টিউশনি করেছি। এরপর কলেজ এবং আইআইটি তে পড়ার সময় সরকারি স্কলারশিপ পেয়েছি। তাই দিয়েই পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছি। আমার প্রিয় বিষয় অংক। তাই খড়গপুর আইআইটিতে অংকের “গ্রাফ থিওরি” নিয়ে পিএইচডি করেছি। এরপর পোস্ট ডক্টরেট ডিগ্রির জন্য ডাক পেয়েছি ইজরায়েলের বার-ইলান ইউনিভার্সিটি থেকে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আলেকজান্ডার গুটারম্যান এর তত্ত্বাবধানে গবেষণা চালাবো।’ শিবশংকরের আরও বক্তব্য, ‘মা-বাবার জন্য আজ এতদূর এসে পৌঁছতে পেরেছি আমি। আমাকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য তাঁদের প্রচুর অবদান রয়েছে। এছাড়াও স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সহ অন্যান্যদের কাছ থেকেও প্রচুর সহযোগিতা পেয়েছি। আমি মনে করি মেধা এবং অধ্যবসায় থাকলে যে কোন মেধাবী ছাত্র উচ্চশিক্ষা।’