জয়ন্ত সরকার ও পঙ্কজ মহন্ত, গঙ্গারামপুর ও বালুরঘাট: গ্রামের বড় খাঁড়িতে সাঁতার কেটেই বাসিন্দাদের হাটে বাজার করতে যেতে হয়। পারাপারের কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। একাধিক জায়গায় জানিয়েও সুরাহা হয়নি। এমনকি বাজারে যেতে সেই সাঁতার কেটেই পার হতে গিয়ে মৃত্যু হয় আদিবাসী তরুণের। সুরাহা চেয়ে চলতি মাসের ৪ তারিখে জেলা শাসকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন গঙ্গারামপুর ব্লকের (Gangarampur) জাহাঙ্গিরপুর অঞ্চলের লক্ষ্মীরামপাড়ার বাসিন্দারা।
বর্ষায় জল থইথই খাঁড়ি। গ্রামবাসী সেই খাঁড়ি পার করে বিভিন্ন কাজে শিববাড়ি এলাকায় যান। কিন্তু সেই খাঁড়ি দিয়ে যাতায়াতের কোনও মাধ্যম এখনও পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি। গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার জন্য স্কুলে যেতেও নিত্যদিন হয়রানির শিকার হতে হয়। ঘুরপথে স্কুলে যেতে হয়। জাহাঙ্গিরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কাশিমপুর মৌজায় লক্ষ্মীরামপাড়ায় মূলত তপশিলি উপজাতিদের বসবাস। খাঁড়ির ওপারে শিববাড়িহাট। যেখানে বাজার করতে যেতে সাঁতার কেটে পার হতে হয় বাসিন্দাদের।
এলাকাবাসী ভরত মুর্মু বলেন, ‘বর্ষায় ওই খাঁড়ির জল বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। র্যাশন ও খাদ্যসামগ্রী পেতে আমাদের হয়রান হতে হয়। কারণ ওই খাঁড়ি পারাপারের কোনও ব্যবস্থা নেই।’ একই কথা মঙ্গলি টুডুরও। জানান, সেতু না হলে আন্দোলনে নামবেন তাঁরা।
অনুপমা রায়ের কথায়, ‘কাশিমপুর ও লক্ষ্মীরামপাড়ার মাঝে খাঁড়িতে কোনও ব্রিজ নেই। তাই বর্ষায় আমাদের চলাচলে খুব সমস্যায় পড়তে হয়। বর্ষার সময় হয় সাঁতরে, কিংবা কলা গাছের ভেলায় করে আমাদের যাতায়াত করতে হয়। এই খাঁড়িতে একটা ব্রিজের খুব প্রয়োজন।’
সমস্যা প্রসঙ্গে জাহাঙ্গিরপুর অঞ্চলের প্রধান শর্মিলা রায় বলেন, ‘আমাদের কাছে এই সমস্যার বিষয়ে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে ওই এলাকায় যাতায়াতের একটা সমস্যা রয়েছে। জেলা থেকে কাজটি করার কথা শুনেছিলাম।’
বিজেপির দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সহ সভাপতি প্রদীপ সরকার তৃণমূল সরকারকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘তৃণমূলের উন্নয়ন মানেই মিথ্যার একটা ফাঁদ। শুধু ওই গ্রাম কেন? এরকম রাস্তাঘাটের সমস্যা বহু জায়গায় রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র প্রায় এই ধরনের চিত্র। কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত প্রকল্পের টাকা এরা লুটপাট করে খেয়ে ফেলেছে। গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে প্রচুর টাকা এসেছে। কিন্তু এরা কোনও কাজ করেনি। এদের কাজই হল কেন্দ্র থেকে টাকা আসবে, আর এরা সেই টাকা মেরে খাবে।’
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের সদস্য মৃণাল সরকারের কথায়, ‘ওটা দীর্ঘদিনের সমস্যা। বিষয়টি জানি। ওখানে একটা কালভার্টের জন্য আমরা বিভিন্ন জায়গায় প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তবে এই কালভার্টটি গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি কিংবা জেলা পরিষদ থেকে সম্ভব হচ্ছে না। এর আগে আমরা একটা এস্টিমেট করেছিলাম, ওখানে ব্রিজ করতে ৫-৬ কোটি টাকা লাগবে। এইজন্য আমরা বিধায়ক এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের কাছে ইতিমধ্যেই প্রস্তাব পাঠিয়েছি। সম্ভবত আগামী অর্থবর্ষে এটি অ্যাপ্রুভ হবে।’