রাজু হালদার, গঙ্গারামপুর: ছোটবেলার ছোট নদী এখন আর বর্ষাতেও এঁকেবেঁকে চলে না। এই অভ্যস্ত দৃশ্যেই এক অন্য ছবি আঁকল গঙ্গারামপুরের (Gangarampur) পুনর্ভবা নদী। টানা বৃষ্টির জেরে নদী এখন পুনর্গর্ভা। ছলাৎ ছলাৎ শব্দে নৌকা বেয়ে এগিয়ে চলেছেন মাঝিরা। কিন্তু ভরা নদীর চেনা ছন্দে তাল কাটছে ছোট মাছের ধরা না দেওয়া। গভীর জলের বুকে জাল ফেলে চিরুনি তল্লাশি করছেন জেলেরা। তবে মাছের দেখা না পেয়ে চরম হতাশা নিয়ে ফিরতে হচ্ছে।
ডিঙিতে নদীর বুক চষে ফেলবার পর একরাশ হতাশা নিয়ে কালীতলার সুদেব হালদার বলেন, ‘প্রায় এক মাস ধরে কমবেশি প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়ে চলেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে নদী জলে পরিপূর্ণ। গত বছরও কিছু চুনো মাছের দেখা মিলত। কিন্তু এবছর একদম ব্যতিক্রম। নদীতে তেমন কোনও মাছের দেখাই মিলছে না।’
এবিষয়ে পরিবেশপ্রেমী সজল মজুমদার জানান, সারা বছর জলশূন্যতার কারণে এই নদীর নিজস্ব মৎস্য বৈচিত্র্য লুপ্ত হওয়ার পথে। নদীয়ালি মাছেরা ঠিকমতো নিজেদের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে পারছে না, এমনকি বংশবিস্তারও করতে পারছে না। ফলে ক্রমশ নদীয়ালি মাছ লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে মৎস্যজীবীরা (Fishermen) পেশাগত সংকটে ভুগছেন।
নদীর পাড়ে জাল নিয়ে মাছের আশায় বসে থাকা বাঁধমোড় এলাকার মৎস্যজীবী সুধন্য সরকার বলেন, ‘এক সময়ে পুনর্ভবা নদীতে তিনকাঁটা, ট্যাংরা, খরকি, রাইখোর, মায়া, পিয়ালি সহ বিভিন্ন মাছের দেখা মিলত। এমনকি বোয়াল মাছ সহ অন্য বড় বড় মাছেরও দেখা পাওয়া যেত। গত কয়েকবছর ধরে এইসব নদীয়ালি মাছের সংখ্যা অনেকটাই কমে এসেছে। তবে এবার নদীয়ালি মাছের যেন আকাল পড়েছে।’
মৎস্যজীবী সুরজিৎ সন্ন্যাসীর কথায়, ‘বাংলাদেশ থেকে এপারে আসার পর থেকেই পুনর্ভবা নদীতে মাছ ধরে জীবিকানির্বাহ করছি। এখন নদীতে প্রায় সারাবছর জল না থাকার কারণে নদীয়ালি মাছের সেভাবে দেখা মেলে না। এর ফলে সিংহভাগ মৎস্যজীবী অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে গিয়েছেন। আমি নিজে বছরের বেশিরভাগ সময় পুকুরে মাছ চাষ করি। বর্ষার সময় নদীতে মাছ ধরতে এসে এই অবস্থা দেখে ভীষণ উদ্বেগ হচ্ছে।’
নদী বিশেষজ্ঞ সুপ্রতিম কর্মকারের কথায়, ‘মিষ্টি জলের মাছ না কমে যাওয়া একদিনের ঘটনা নয়। দীর্ঘদিন ধরে নদীর উপর মানুষ অত্যাচার চালাচ্ছে। নদীতে মিশছে নিকাশিনালার বিষাক্ত জল। একদিকে নাব্যতা কমছে, তার ওপর দূষণ মাছের সংখ্যা কমাতে অনুঘটকের কাজ করছে।