Gangarampur | জন্মলগ্ন থেকে নির্বাচন হয়নি, দেড় কোটির বেশি তছরুপের অভিযোগ কৃষি সমবায়ে

Gangarampur | জন্মলগ্ন থেকে নির্বাচন হয়নি, দেড় কোটির বেশি তছরুপের অভিযোগ কৃষি সমবায়ে

আন্তর্জাতিক INTERNATIONAL
Spread the love


জয়ন্ত সরকার, গঙ্গারামপুর: ১ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছে গঙ্গারামপুরের একটি কৃষি সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে। অভিযোগ, জন্মলগ্ন থেকে সমিতির কোনও নির্বাচন হয়নি। সঙ্গে চলছে তৃণমূল নেতাদের স্বজনপোষণ। এমনকি সরকারি অডিট নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। সমিতির স্পেশাল অফিসার আংশিকভাবে এই অভিযোগের সত্যতা মেনে নিয়েছেন। স্থানীয় কৃষক এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রান্তিক মহিলাদের কষ্টার্জিত অর্থ তছরুপের বিরুদ্ধে তদন্ত করে জেলা শাসকের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন জেলার বিজেপি নেতা মানস সরকার। তবে থানা বা সমিতিতে এই নিয়ে এখনও কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি।

গঙ্গারামপুর ব্লকের উদয় অঞ্চলের ফুলবািড় এলাকায় রয়েছে উদয় ইউনিয়ন কোঅপারেটিভ অ্যাগ্রিকালচার ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেড। ১৯৫৮ সালে গঠিত এই কৃষি সমবায় সমিতির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৭৫০-এরও বেশি। অথচ সমিতির জন্মলগ্ন থেকে পরিচালন কমিটির কোনও নির্বাচন হয়নি। অভিযোগ, সমিতি দিন-দিন স্বজনপোষণে ভরে উঠেছে। সাধারণ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রান্তিক মহিলারা তাঁদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

দীর্ঘদিন ধরে এই সমিতির ম্যানেজার ছিলেন হাফিজউদ্দিন সরকার। পরবর্তীতে তাঁর ছেলে নুরুল সরকার। নুরুল সরকারের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে তাঁর ছেলে ওয়াসিম সরকার কিছুদিনের জন্য দায়িত্ব সামলেছেন এই সমিতির। তবে দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসার পর তাঁকেও দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সমিতিতে পারিবারিক মৌরসিপাট্টা নিয়ে এলাকাবাসীর কটাক্ষ, ‘আগে ছিল বাবা-ছেলের সমিতি, এখন দাদু-নাতির সমিতি’।

সমিতির সদস্য স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা তঁাদের জমা টাকার হিসাব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন তুলছিলেন। দিন পনেরো আগে তঁাদের ক্ষোভ এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, সমিতির অফিসে তালা ঝোলাতে যান তঁারা। হিসেবের গরমিল নিয়ে তঁাদের প্রশ্নের জবাব দিতেই গত বৃহস্পতিবার সমিতির কর্তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসেন। সেখানেই দেখা যায়, হিসাবে বড়সড়ো গরমিল রয়েছে। ব্যাংকের স্টেটমেন্টের সঙ্গে সমিতির খাতার হিসাব মিলছে না। সূত্রের খবর, প্রাথমিকভাবে দেড় কোটি টাকারও বেশি গরমিল রয়েছে।

কৃষি সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন বিজেপির দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সহ সভাপতি মানস সরকার। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই কৃষি সমবায় সমিতিটি তৃণমূলের একটা চুরির আখড়া। আমি জ্ঞানত কোনওদিন দেখিনি এই সমিতিতে কোনও নির্বাচন হয়েছে। এখানে তৃণমূলের কয়েকজন নেতা সংঘবদ্ধভাবে লুঠতরাজ করে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা প্রতারিত হচ্ছেন। এদের অডিট নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংক স্টেটমেন্ট থেকে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে ১ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা সমিতি থেকে তছরুপ হয়েছে। সমবায়ের সম্পূর্ণ সম্পত্তি এবং ঘর ও দোকান ভাড়া সহ সবকিছুর হিসাব নিয়ে তদন্ত হলে এই আর্থিক কেলেঙ্কারি ৫ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। কৃষক এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রান্তিক মহিলাদের কষ্টার্জিত অর্থের তছরুপের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে মাননীয় জেলা শাসকের হস্তক্ষেপ দাবি করছি। যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এই সমবায় সমিতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে সমস্ত দুর্নীতির পর্দা ফাঁস হোক, এই দাবি আমরা জানাচ্ছি।’

সমিতির স্পেশাল অফিসার রূপম সাহা অবশ্য বলেন, ‘এটা ভুল তথ্য। যিনি অভিযোগ করেছেন তাঁকে প্রমাণ করতে হবে। অত টাকার হিসােব গরমিল নেই। কিছুটা হবে। কতটা সেটা সমিতির স্টাফরা বলতে পারবেন।’  সমিতির এক অস্থায়ী কর্মচারী জানান, সমস্ত হিসেবের জন্য অ্যাকাউন্ট্যান্ট নিয়োগ করা হয়েছে। সম্পূর্ণ তথ্য পেতে এক সপ্তাহের মতো সময় লাগবে।

সমিতির নির্বাচন সম্পর্কে রূপম বলেন, ‘নির্বাচনের নোটিশ শুক্রবারই দেওয়া হয়েছে। আর কিছু বলতে পারব না।’ এতদিন কেন নির্বাচন হয়নি, তার জবাব না দিয়ে তিনি ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে আর ফোন ধরেননি।

তবে ঘটনার কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন সমিতির প্রাক্তন ম্যানেজার হাফিজউদ্দিন সরকার। তিনি বলেন, ‘আমি ২০১৭ সালে অবসর নিয়েছি। তাই আমি এই বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। আমার যতদূর জানা আছে, এই ধরনের কিছু হয়নি।’ তবে সমিতির নির্বাচন হয়নি বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের নোটিশ দিয়েছে বলে শুনেছি।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *