রাজু হালদার, গঙ্গারামপুর: হাইকোর্টের নির্দেশে গঙ্গারামপুর ব্লকের ঠ্যাঙাপাড়ায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হল। শুক্রবার সকালে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি এবং পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে ঠ্যাঙাপাড়া লাগোয়া কড়িয়াল এলাকার ৫১২ জাতীয় সড়কের পাশে বিশেষ অভিযান চালানো হয়।
মহকুমা পুলিশ আধিকারিক, গঙ্গারামপুর থানার আইসি সহ বিশাল পুলিশবাহিনীর উপস্থিতিতে নজরদারি এলাকার ৬টি বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। দীর্ঘদিনের বসতবাড়ি ভাঙতেই এলাকায় কান্নার রোল পড়ে যায়।
উচ্ছেদ অভিযানে গৃহহীন বাসনা রায় বলেন, ‘দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস করছি। বেশ কয়েক বছর আগে পেট্রোল পাম্প তৈরির জন্য ওই জায়গা থেকে উচ্ছেদের কথা বলা হয়। বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। কিন্তু বিকল্প বসবাসের ব্যবস্থা করতে পারিনি। আজ বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হল। বাড়ি থেকে কিছুই বের করতে পারিনি। এখন অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে কোথায় যাব?’
স্থানীয় বাসিন্দা গোপাল সরকারের কথায়, ‘বেশ কয়েকবার আমাদের এই এলাকায় ছয়টি বাড়ি উচ্ছেদের জন্য প্রশাসনিক আধিকারিকরা এসেছিলেন। শেষবার এসে ৯০ দিন সময় দিয়ে গিয়েছিলেন। পাশাপাশি মূল রাস্তা থেকে ১২ মিটার পিছিয়ে যাওয়ারও নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেইমতো পিছিয়েও গিয়েছিলাম। কিন্তু আজ আবার বাড়িঘর ভেঙে দিচ্ছে।’
ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটির অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার বিপ্লব রায়ের বক্তব্য, ‘কড়িয়ালে একটি পেট্রোল পাম্প হওয়ার কথা। আমরা ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটির তরফে সেই অনুমতি দিয়েছিলাম। কিন্তু এই এলাকায় দখল থাকবার জন্য সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে হাইকোর্টের নির্দেশে ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় ছয়টি বাড়ি আজকে উচ্ছেদ করা হল।’
পুনর্বাসন প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘প্রত্যেকেরই নিজস্ব পৃথক বাড়ি রয়েছে। তারা গায়ের জোরে এই জায়গা দখল করেছিলেন।’
মহকুমা পুলিশ আধিকারিক দীপাঞ্জন ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি আমাদের কাছে উচ্ছেদের অনুরোধ করেছিল। তাদের উপস্থিতিতে এবং হাইকোর্টের নির্দেশে আজ ছয়টি বাড়ি উচ্ছেদ করা হয়েছে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঠ্যাঙাপাড়া বাজার সংলগ্ন কড়িয়াল এলাকায় দীপঙ্কর রায় নামে এক ব্যক্তি পেট্রোল পাম্পের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি পান। কিন্তু পাম্প তৈরির নির্দিষ্ট জায়গার সামনের অংশে বেশ কয়েকটি বসতবাড়ি থাকার কারণে নির্মাণকাজ কোনওভাবেই শুরু করা যাচ্ছিল না। এই পরিস্থিতিতে সাত বছর আগে দীপঙ্করবাবু উচ্চআদালতের দ্বারস্থ হন। অবশেষে এদিন উচ্ছেদ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা হয়।
দীপঙ্কর রায়ের কথায়, ‘দীর্ঘ ৭ বছর আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে পেট্রোল পাম্প তৈরির কাজ শুরু হবে। যারা জবরদখল করেছিলেন, তাদের আমি পুনর্বাসনেরও আশ্বাস দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমার কথা শোনেননি। অবৈধভাবে জায়গা দখল করেছিলেন।’