আজাদ, মানিকচক: গঙ্গা নদীর জলস্তর কমতেই শুরু ব্যাপক ভাঙন। ভূতনির নবনির্মিত রিং বাঁধের কেশরপুর পশ্চিম রতনপুর সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ধস নেমেছে। ভয়ে বাঁধ ছেড়ে পালিয়েছেন বাঁধের উপর আশ্রয় নেওয়া দুর্গতরা। আবার জল বাড়লে বাঁধ সম্পূর্ণ ধসে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এমন পরিস্থিতিতে মথুরাপুরের শংকরটোলায় ভাঙন রোধের কাজ দেখে ক্ষুব্ধ বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র সেচ দপ্তরের আধিকারিকদের রীতিমতো ধমক দিলেন। স্পষ্ট জানিয়েছেন, নিম্নমানের কাজ কোনওভাবেই বরদাস্ত নয়। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাবেন বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। তবে ভূতনিতে ক্রমশ বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। গঙ্গা ও ফুলহরের জলস্তর কমেছে। জলস্তর কম থাকলেও একেবারে ভূতনির নবনির্মিত রিং বাঁধের গা ঘেঁষে বইছে গঙ্গা। জল কমতেই শুরু হয়েছে ভাঙন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ভূতনির নবনির্মিত রিং বাঁধের বেশ কিছুটা জায়গা গঙ্গাগর্ভে চলে গিয়েছে। কেশরপুর, কালুটোনটোলা, পশ্চিম রতনপুরের বিভিন্ন জায়গায় ধস নেমেছে।
প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ভূতনির সদ্যনির্মিত রিং বাঁধ ইতিমধ্যেই গঙ্গাভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ২৪ মিটার দীর্ঘ রিং বাঁধের যেখানে-সেখানে ধস নেমেছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সেচ দপ্তর ভাঙন রোধের কাজ শুরু করলেও প্রচণ্ড আতঙ্কে রয়েছেন নতুন বাঁধের উপর আশ্রয় নেওয়া দুর্গতরা। ইতিমধ্যেই আতঙ্কে বাঁধ ছেড়ে পালিয়েছে বেশ কয়েকটি পরিবার। আবার মথুরাপুরের শংকরটোলায় ভাঙন রোধের কাজ দেখতে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মানিকচকের বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র। কাজের হাল দেখে ঠিকাদারি সংস্থা ও সেচ দপ্তরের আধিকারিকদের ধমক দেন সাবিত্রী।
শুধু ধস নয়, পশ্চিম রতনপুরে বাঁধের একটা অংশ গঙ্গায় চলে গিয়েছে। বর্তমানে জলস্তর কম থাকায় সেই জায়গায় বালির বস্তার মাধ্যমে জল আটকে রাখা হয়েছে। ঠিক একইভাবে কেশরপুর ও কালুটোনটোলার তিনটি জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এভাবে ভাঙনের ফলে অনেকে বাঁধ ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। প্রমিলা চৌধুরী নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘বাড়িঘর জলের তলায়। অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। তাই বাঁধের উপরেই থাকছি। যেভাবে ভাঙন হচ্ছে, তাতে রাতের ঘুম উড়েছে আমাদের। যে কোনও মুহূর্তে গঙ্গায় তলিয়ে যেতে পারে বাঁধ।’
অন্যদিকে মানিকচকের মথুরাপুরের শংকরটোলায় ভাঙন রোধের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় বৃহস্পতিবার কাজ খতিয়ে দেখতে আসেন সাবিত্রী মিত্র। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিডিও অনুপ চক্রবর্তী, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পিংকি মণ্ডল। ভাঙন রোধের কাজের মান দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিধায়ক। স্থানীয়রা অভিযোগ করে আসছিলেন, বস্তায় নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে অনেক কম পরিমাণ বালি ভরা হচ্ছে। সেই অভিযোগ শুনে ঠিকাদারি সংস্থা ও সেচ দপ্তরের আধিকারিকদের রীতিমতো ধমক দেন সাবিত্রী। কেন বস্তায় কম বালি ভরা হচ্ছে, তা জানতে চান। বলেন, ‘ভাঙন রোধের কাজে কোনও আপস হবে না। সরকারি একটি টাকাও তছনছ হতে দেব না। আমি সাফ জানিয়ে দিয়েছি, নিম্নমানের কাজের অভিযোগ পেলেই মুখ্যমন্ত্রীকে লিখিত অভিযোগ জানাব।’