Gairkata | ট্রাইসাইকেলে ৭ কিমি পেরিয়ে কাজে সুমন্তী

Gairkata | ট্রাইসাইকেলে ৭ কিমি পেরিয়ে কাজে সুমন্তী

শিক্ষা
Spread the love


আব্দুল লতিফ, গয়েরকাটা: যে রকম আর পাঁচটা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র হয়, তার সঙ্গে গয়েরকাটা বাঁশ লাইনের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটির খুব একটা পার্থক্য নেই। স্থানীয় দরিদ্র পরিবারের মায়েরা ও খুদেরা এখানে আসেন। তাঁদের পুষ্টির দিকে নজর দেওয়া হয়। তাহলে এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটির কথা আলাদা করে বলতে হবে কেন? তাহলে বলতে হবে গয়েরকাটা (Gairkata) চা বাগান থেকে গয়েরকাটা বাঁশ লাইনের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটির দূরত্বের কথা। তারপর বলতে হবে সেই কেন্দ্রের সহায়িকা সুমন্তী তিরকির কথা। দূরত্ব প্রায় ৭ কিলোমিটার। আর এই ৭ কিমি রাস্তা ট্রাইসাইকেলে চেপে পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন সেই কেন্দ্রের দরজা খুলতে পৌঁছে যান সুমন্তী।

বানারহাট ব্লকের গয়েরকাটা চা বাগানের বিঘা লাইনে বাড়ি সুমন্তীর। তাঁর এক পা অচল। এমনিতে লাঠিতে ভর দিয়ে চলাফেরা করেন। আর দূরত্ব বেশি হলে ভরসা ট্রাইসাইকেল। রোদ, বৃষ্টি-ঝড় যা খুশি হোক, কুছ পরোয়া নেই। সুমন্তী ঠিকই পৌঁছে যাবেন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে। তারপর ট্রাইসাইকেল রেখে নেমে পড়েন নিজের কাজে। লাঠিতে ভর দিয়ে হেঁটে হেঁটে কেন্দ্রের দরজা-জানলা খোলা থেকে শুরু করে খিচুড়ি রান্না, সব কিছু করেন নিজের হাতে। ভালোবেসে।

তাঁর এহেন কর্মকাণ্ড সাড়া ফেলেছে এলাকায়। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সান্তিউস তিরকি বলেন, ‘সুমন্তী আমাদের গর্ব। প্রতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়ে তিনি যেভাবে কাজ করেন তা প্রশংসার যোগ্য। প্রতিদিন‌ সকালে বাচ্চারা পৌঁছানোর আগেই পৌঁছে যান সুমন্তী। দায়িত্ব নিয়ে নিজের সন্তানের মতো সেই কেন্দ্রের শিশুদের আগলে রাখেন।’

সুমন্তীর দুই ছেলে রয়েছে। কিন্তু স্বামী তাঁদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। সন্তানদের দায়িত্বও তিনি নেন না। বর্তমানে বৃদ্ধ মায়ের বাগানের ভাঙাচোরা কোয়ার্টারেই দুই সন্তানকে নিয়ে দিনযাপন করছেন সুমন্তী। বড় ছেলে স্থানীয় একটি প্রাথমিক স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির ও ছোট ছেলে প্রথম শ্রেণির ছাত্র। পরিশ্রম করে ছেলেদের মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলাই সুমন্তীর স্বপ্ন।

এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রই যেন তাঁর প্রথম ভালোবাসা। তাই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে বৃদ্ধ মা ও ছোট দুই সন্তানকে খাইয়ে তিনি ট্রাইসাইকেল চালিয়ে বেরিয়ে পড়েন কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে। সুমন্তী বলছেন, ‘আমার জীবনটাই কষ্টের। শারীরিক কষ্ট তো আছেই, চেষ্টা করি সময় মেনে নিজের দায়িত্ব পালনের। কারণ এই কাজই আমার একমাত্র সম্বল। এই কাজ থেকে প্রাপ্ত অর্থেই আমার সংসার চলে। স্বামী অন্যত্র থাকে। আমাদের খোঁজটুকুও নেয় না।’

সেই অঙ্গনওয়াড়ির কর্মী মঞ্জু টিগ্গা জানিয়েছেন, সুমন্তী খুব ভালো মনের মানুষ। প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও নিজের কাজ দায়িত্ব সহকারে পালন করেন। বিশেষ অসুবিধা না হলে ছুটিও নেন না। এলাকাবাসীও তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। স্থানীয় মনোজ তিরকির কথায়, ‘যেখানে সুস্থরা কাজে ফাঁকি দেওয়ার বাহানা খোঁজে, সেখানে সুমন্তী সময়ের আগে কেন্দ্রে পৌঁছে যান।’ আপাতত সুমন্তী লড়ছেন ছেলেদের শিক্ষার জন্য। ইচ্ছে থাকলেও সন্তানদের পড়াশোনায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ। বললেন, ‘যা বেতন পাই, তা মায়ের ওষুধ কিনতে আর খাওয়াদাওয়া করতেই শেষ হয়ে যায়। ছেলে দুটিকে কোনও আবাসিক স্কুলে ভর্তি করাতে চাই। কিন্তু কীভাবে করব, বুঝতে পারছি না।’ সেজন্য সহৃদয় ব্যক্তি বা সংগঠনের কাছে সহায়তা চেয়েছেন তিনি।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *