ফরাক্কা ও বহরমপুরঃ ফরাক্কায় জলের তোড়ে ভেঙে গেল ফিডার ক্যানালের পশ্চিম পাড়ের রাস্তা। ফলে নিশিন্দ্রা ধর্মডাঙ্গা, ঘোড়াইপাড়া, বেওয়া গ্রামের মানুষজন বিপাকে পড়েছেন। আর তার ফলে সড়কপথে ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে সংযোগ প্রায় ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
১৯৮৬ সাল থেকে এই সমস্যা চলে আসছে। সিপিএম-কংগ্রেস চলে গিয়ে রাজনীতির পালাবদলে আসে তৃণমূল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা স্বরূপ মণ্ডল বলেন, ‘সেই বাম আমল থেকে দেখলাম কোনও উন্নতি নেই। প্রতিবছর ভারী বর্ষা এলে পাহাড়ি ঢালে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পাশাপাশি জলের তোড়ে গ্রামগঞ্জের ফসল নষ্ট হয়। একটু আগেই একটা স্কুলের বাচ্চা পড়ে গিয়েছিল। ওই জলে কোনওমতে প্রাণে বেঁচেছে। জানি না কতদিন সইতে হবে এভাবে।’
ঝাড়খণ্ড থেকে সাইকেল করে প্রতিদিনই আসেন সঞ্জয় সিনহা। কাজের সুবাদেই তাঁর আশা। তিনি বলেন, ‘এবার এত ভারী বর্ষা। তাই কাটানের রাস্তা জলের তোড়ে ভেঙে গেল। এখন আর মালপত্র নিয়ে সাইকেল করে যেতে পারব না। এভাবে ক’দিন ব্যবসা বন্ধ রাখব বলুন। কাটানের সমস্যার কোনও স্থায়ী সমাধানই হচ্ছে না।’
রাজ্য তৃণমূলের সহ সভাপতি মইনুল হক বলেন, ‘আমি কংগ্রেসে থাকাকালীন চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ফরাক্কা ব্যারেজ কোনও কালেই ওখানে ব্রিজ নির্মাণের ছাড়পত্র দেয়নি। এখনও চেষ্টায় রয়েছি ব্যারেজের তরফে এনওসির জন্য।’
ফরাক্কার বিধায়ক মণিরুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে কেন্দ্রীয় সরকারের দুটো বড় প্রোজেক্ট। তাদের বহুবার বলেছি। কিন্তু কোনও হেলদোল নেই। প্রচুর জায়গা ব্যারেজ দখল করে রেখেছে। এই কাটান জায়গাটাও ব্যারেজের অন্তর্ভুক্ত। ব্যারেজ এনওসি দিচ্ছে না। ফলে আমরা রাজ্য সরকার থেকে কাজ করাতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছি। অন্যদিকে উঁচু করে ছাইগাদার পুকুর অনেক আগে থেকেই তৈরি করে রেখেছে এনটিপিসি। ফলে জল বাধাপ্রাপ্ত হয়ে জমে থাকছে এলাকায়।’
এদিকে, ভারী বর্ষণ আর ব্যারেজের ছাড়া জলের তোড়ে ব্রাহ্মণীর বাঁধ উপচে এলাকা জলমগ্ন হয়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সতর্কতা জারি করে মাইকিং করা হচ্ছে। দেউচা ব্যারেজ থেকে জল কয়েক দফায় ২২ হাজার কিউসিকের বেশি ছাড়ার ফলে মুর্শিদাবাদের কান্দি মহকুমার অন্তর্গত খড়গ্রামের ব্রাহ্মণী নদীবাঁধ উপচে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে সকাল থেকেই। ফলে আতঙ্কিত বাসিন্দারা দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যেতে শুরু করেছেন। সেইসঙ্গে এলাকাবাসীদের সতর্ক করতে মাইকিং চালু হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিস্তীর্ণ হাজিপুর, পোড়াডাঙ্গা, সিয়াটা, কামারপুকুরের মতো নীচু এলাকাগুলোতে জল ঢুকতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ওই এলাকায় প্রশাসনের একটি টিম পৌঁছে গিয়েছে। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুমও। স্থানীয় বাসিন্দা শামসুল শেখ বলেন, ‘সকাল হতেই ব্রাহ্মণী যেভাবে ফুঁসতে শুরু করেছে, তাতে হুহু করে এলাকায় জল ঢুকে প্লাবিত করতে শুরু করেছে। কোনওরকমে ছেলেপুলে নিয়ে আমরা গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে আত্মীয়র বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।’
এদিকে, ব্রাহ্মণী নদীর সাঁকোঘাট এলাকায় জলস্তর বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। তাই নদীর সীমানা লাগোয়া গ্রামগুলির বাসিন্দাদের সাবধানে থাকতে বলা শুরু হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এই ব্যাপারে স্থানীয় বিডিও মিলনি দাস বলেন, ‘আমরা পুরো পরিস্থিতি মনিটরিং করছি। বিভিন্ন জলমগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা হচ্ছে। ফ্লাড সেন্টারগুলিতে এলাকবাসীর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।’