ভাস্কর শর্মা, ফালাকাটা: প্রতিদিনের মতোই বুধবার ফালাকাটা (Falakata) ট্রাফিক মোড় তখন ব্যস্ত। আচমকা বিকেল চারটার দিকে ট্রাফিক মোড়ের একদিকে ব্যাপক শোরগোল বাধে। জড়ো হয়ে যান পথচলতিরা। এক তরুণকে ধরে টানাটানি করতে দেখা যায় দুই মহিলাকে। তার সঙ্গে সমানে চলছে চড়থাপ্পড়, কটুকথা। শেষে মাটিতে ফেলে ব্যাপক মারধর। কেউ কোনওভাবেই যেন হাল ছাড়বে না। এই দৃশ্য দেখতে আবার ভিড় জমে যায় ট্রাফিক চত্বরে। এমনকি শেষে জমায়েত থেকে টিপ্পনী ওঠে, ‘স্বামী তুমি কার?’ আর এর পরেই পুলিশি হস্তক্ষেপে শেষে ঘটনার ইতি ঘটে।
পুণ্ডিবাড়ির (Pundibari) বাসিন্দা পেশায় টোটোচালক প্রায় ১০ বছর আগে বিয়ে করেন। দুই সন্তানও রয়েছে। গত সোমবার ভাড়া রয়েছে বলে বাড়ি থেকে বের হন। কিন্তু দু’দিন ধরে আর বাড়ি ফেরেননি। এই অবস্থায় আবার টোটোচালকের শ্বশুর শিলিগুড়িতে চিকিৎসাধীন। তাঁকে দেখতে পরিবারের লোকজন শিলিগুড়িতে যান। এমন অবস্থায় চালকের স্ত্রীর কাছে একটি ফোন আসে। বলা হয়, তাঁর স্বামী ফালাকাটার সাতমাইলে এক মহিলার সঙ্গে থাকছেন। পালিয়ে গিয়ে তাঁদের নাকি বিয়ে করারও কথা রয়েছে। এমন ফোন পেয়েই সোজা ফালাকাটার সাতমাইলে চলে আসেন স্ত্রী। স্বামীকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে ফালাকাটা ট্রাফিক মোড়ে এসে বসে থাকেন। বিকালের দিকে আবার তাঁর বাপের বাড়ির লোকজনও শিলিগুড়ি থেকে ফালাকাটায় নামেন। সকলে ট্রাফিক মোড়েই টোটোচালককে হাতেনাতে ধরার অপেক্ষায় ছিলেন। হঠাৎ বিকাল চারটা নাগাদ স্বামীকে অন্য এক মহিলার হাত ধরে রাস্তার পাশ দিয়ে যেতে দেখতে পান স্ত্রী। সঙ্গে সঙ্গে একেবারে হাতেনাতে ধরে ফেলেন স্বামী ও তাঁর সেই প্রেমিকাকে। এরপরই শুরু হয় ধুন্ধুমার কাণ্ড। চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে নিয়ে আসা হয় তরুণকে। মহিলাকেও বেধড়ক মারধর করা হয়। ট্রাফিক মোড় পার করে দক্ষিণ দিকে থাকা কংগ্রেস পার্টি অফিসের দিকে নিয়ে আসা হয়। পরিস্থিতি হাতের বাইরে যেতে দেখে কেউ কেউ চিৎকার করতে থাকে। কেউ আবার হাততালি দিয়ে মজা নেয়। ততক্ষণে চলে আসে ট্রাফিক পুলিশ। এই চুলোচুলি থামাতে চাইলেও ব্যর্থ হয়। পরে থানায় খবর দেওয়া হলে পুলিশ আসে। প্রেমিকা সহ তরুণকে পুলিশ থানায় তুলে নিয়ে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
ট্রাফিকে উপস্থিত শহরের বাসিন্দা সঞ্জয় চক্রবর্তীর কথায়, ‘পরকীয়া নিয়ে এমন ঘটনা আগে কোনওদিন দেখিনি।’ আরেক তরুণ শ্রাবণ দাসের কথায়, ‘কার স্বামী যে সেটাই বোঝা যাচ্ছিল না। প্রথমে মারপিট দেখছিলাম ঠিকই, কিন্তু পরে পরিস্থিতি দেখে আমরাই ট্রাফিক পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলি।’ ফালাকাটা থানার আইসি অভিষেক ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, ‘ঘটনা নিয়ে কেউ অভিযোগ করেনি।’