ফালাকাটা: এবার শিবির করে মহাসড়কের কাজ আটকানোর কৌশল শুরু হল ফালাকাটার রাইচেঙ্গায়৷ সেখানে ইতিপূর্বেই এই কাজ নিয়ে আইনি জটিলতা ছিল। মাঝে কিছুদিন মহাসড়কের কাজ বন্ধও ছিল। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা জানতে পারেন, আইনি জটিলতা থাকলেও মহাসড়কের কাজ শুরু হতে চলেছে। তখন তাঁরা রাস্তার পাশে ত্রিপল টাঙিয়ে অস্থায়ী শিবির গড়ে করে নজরদারি শুরু করেন। বৃহস্পতিবার নির্মাণকারী সংস্থা কাজ করতে এলে বাধা দেন এলাকাবাসী।
রাস্তার ধারে সেই শিবিরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থেকে নজরদারি চালানো হবে। যাতে কাজ করতে এলেই সবাইকে দ্রুত খবর দেওয়া যায়। এজন্যই শিবির খোলা হয় বলে দেবেশ্বরী বর্মন, সরস্বতী রায়দের মতো স্থানীয়রা জানান। গত মার্চ মাসেও সেখানকার বাসিন্দারা কাজে বাধা দিয়েছিলেন। স্থানীয় ৫৩ জন বাসিন্দা জমি, ঘরবাড়ি ভাঙা বাবদ ক্ষতিপূরণ পাননি বলে হাইকোর্টে মামলা করেন। এখনও সেই মামলা নিষ্পত্তি হয়নি বলেই স্থানীয়রা জানালেন। এদিকে, এনএইচএআই-এর দাবি, ক্ষতিপূরণের বিষয়টি প্রশাসনিক। তাই কাজে বাধা দেওয়ায় সড়ক কর্তৃপক্ষ এবার বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করবে বলে জানিয়েছে।
মহাসড়কের প্রোজেক্ট ইনচার্জ বিবেক কুমারের কথায়, ‘বৈধভাবে যাঁরা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য, তাঁরা এখনও পাচ্ছেন। এই বিষয়টি পুরোপুরি প্রশাসনিক। আমরা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেই রাইচেঙ্গায় কাজ শুরু করতে যাই৷ কিন্তু কেউ কেউ সেই কাজে বাধা দেন। তাই এখন বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমরা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাব।’
এদিন স্থানীয়রা কাজে বাধা দিলে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় ফালাকাটা থানার পুলিশ। পুলিশ আধিকারিকদের সামনেই আর্থমুভার নামিয়ে কাজ শুরুর তোড়জোড় চলে। তখনও স্থানীয়রা বাধা দেন। পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের কথাও হয়। আন্দোলনকারীরা মামলার বিষয়টি তুলে ধরেন৷ পরে পুলিশ চলে যায়। বন্ধ হয় কাজ। ফালাকাটা থানার আইসি অভিষেক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘সড়ক কর্তৃপক্ষ ওই ব্যাপারে এফআইআর করবে বলে জানিয়েছে। যদি এফআইআর হয় তাহলে সেই ভিত্তিতে মামলা হবে।’
ফালাকাটা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের রাইচেঙ্গা মৌজার বাসিন্দাদের একাংশ নির্মীয়মাণ মহাসড়কের ধারে বহু বছর ধরে বসবাস করছেন। স্থানীয়রা বলছেন, এই গ্রাম পঞ্চায়েতেই অবস্থিত কাদম্বিনী চা বাগান। তাই রাস্তার পাশের জমি কাদম্বিনী চা বাগানের নামেই রেকর্ডভুক্ত। চার লেনের মহাসড়ক হওয়ায় রাস্তা সম্প্রসারিত হবে৷ এজন্য রাস্তার পাশের জমি প্রয়োজন। কিন্তু বাসিন্দারা যে জমিতে ঘরবাড়ি বানিয়ে বছরের পর বছর ধরে বসবাস করছেন তা চা বাগানের নামে রেকর্ড রয়েছে। ২০২২ সালে স্থানীয়দের উচ্ছেদ নোটিশ দেয় প্রশাসন। কিন্তু ক্ষতিপূরণ বা জমির মূল্য না মেলায় তখন বাসিন্দারা হাইকোর্টে মামলা করেন। মামলাকারীদের প্রতিনিধি স্থানীয় নন্দ ঘোষের কথায়, ‘তখন কোর্ট নির্দেশ দেয় আমাদের নিয়ে একটি শুনানি করতে হবে। তারপর ক্ষতিপূরণ ঠিক করে প্রদান করতে হবে। কিন্তু এতদিনেও কিছুই হয়নি।’ তাঁর সংযোজন, ‘সম্প্রতি আমরা হাইকোর্টে আরও একটি মামলা করি। গত ১১ অগাস্ট হাইকোর্টে মামলাটি ওঠে। সেদিন রাজ্য সরকারের কোনও প্রতিনিধি উপস্থিত হননি। তাই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা জায়গা ছাড়ছি না।’