ফালাকাটা: হাতি, বাইসন তো হামেশাই ঢুকে পড়ছে গ্রামে। এবার জলদাপাড়া বনাঞ্চলে পাখির উপদ্রবে নাজেহাল অবস্থা চাষিদের। কখনও দিনেরবেলা, কখনও রাতে, কখনও আবার ভোরে ঝাঁকে ঝাঁকে টিয়া সহ অন্য প্রজাতির পাখির দল চলে আসছে খেতে। বনাঞ্চল লাগোয়া বংশীধরপুর, পারপাতলাখাওয়া, রাইচেঙ্গা গ্রামগুলিতে শসার চাষ করেছেন অনেকে। শসার বাজারদরও ভালো। কিন্তু পাখির উপদ্রবে চিন্তিত চাষিরা৷ এজন্য বাধ্য হয়ে চাষিদের কেউ কেউ গোটা শসাখেত নেট দিয়ে মুড়ে দিচ্ছেন। এজন্য বাড়তি খরচ হচ্ছে। তবে পাখির উপদ্রব থেকে রক্ষা মিলছে। এদিকে পাখি তো আর বন দপ্তর আটকাতে পারবে না৷ তাই নেট দিলেও পাখির যেন কোনও ক্ষতি না হয় সেটা চাষিদের খেয়াল রাখতে হবে বলে বন দপ্তর জানিয়েছে।
পারপাতলাখাওয়া গ্রামে শ্রীদাম দাস এক বিঘা জমিতে শসার চাষ করেছেন। গতবারও শসা চাষ করেছিলেন। কিন্তু গতবছর পাখির উপদ্রবের কারণে বেশি লাভ হয়নি। এবারও শসাখেত নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। তারপর বাধ্য হয়ে শসাখেতে নেট লাগিয়েছেন। শ্রীদামের কথায়, ‘এই নেট লাগানোর জন্য বাড়তি পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়। তবে এখন পাখির উপদ্রব থেকে শসাখেতকে রক্ষা করতে পারছি। তা না হলে গাছের ফুল, শসা এতদিনে হয়তো নষ্ট হয়ে যেত।’ দেখা গেল, গোটা শসাখেতটাই নেট দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছে। এজন্য পাখি এলেও নেট ভেদ করে ভেতরে ঢুকতে পারছে না। রাইচেঙ্গা গ্রামে আধা বিঘা জমিতে শসার চাষ করেন বিমল সরকার। তাঁর খেতও নেট দিয়ে মোড়ানো। বিমল বলেন, ‘হাতি, বাইসন তো মাঝেমধ্যেই গ্রামে ঢুকে পড়ে। এজন্য ভুট্টাখেতেরও ক্ষতি হয়। এখন কোনও চাষাবাদ করে সেভাবে লাভ হচ্ছে না৷ লাভের অংশ বুনোদের পেটে চলে যাচ্ছে। তাই পাখির উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে এবার শসাখেতে নেট লাগিয়ে দিয়েছি।’
স্থানীয়রা আরও বলছেন, গত এক-দেড় বছর ধরে বুনোদের উপদ্রব অনেকটাই বেড়েছে। হাতি, বাইসন ঢুকে কখনও জমির ফসল, কখনও ঘরবাড়ির ক্ষতি করছে। বন লাগোয়া গ্রামগুলি মূলত কৃষিপ্রধান। সারাবছরই চাষাবাদ হয়। কিন্তু এখন বুনোজন্তুদের পাশাপাশি পাখির উপদ্রব নিয়েও দুশ্চিন্তা বাড়ছে। কিন্তু প্রতিরোধ করতে গিয়ে যাতে পাখিদের ক্ষতি না হয় সেই দাবি করছেন পরিবেশপ্রেমীরা। ফালাকাটার ‘সবুজ পৃথিবী’ নামে এক পরিবেশপ্রেমী সংস্থার কর্ণধার সুজিত সরকার বলেন, ‘বনের পাশে থাকলে বন্যপ্রাণীর উপদ্রব মাঝেমধ্যে হবে। এটাই স্বাভাবিক। তবে চাষিদের ফসলও রক্ষা করতে হবে। কিন্তু প্রতিরোধ করতে গিয়ে যাতে পাখির কোনও ক্ষতি না হয় সেটাও চাষিদের খেয়াল রাখতে হবে। দেখতে হবে কোথাও যাতে পাখি ধরার ফাঁদ বসানো না হয়।’
একই আর্জি বন দপ্তরেরও। জলদাপাড়া সাউথের রেঞ্জ অফিসার রাজীব চক্রবর্তী বলেন, ‘বন লাগোয়া গ্রামে হাতি, বাইসন যাতে না ঢোকে সেজন্য রোজ নজরদারি চলছে। তবে পাখি তো উড়ে বেড়াবেই। এজন্য পাখির যাতে কোনও ক্ষতি না হয় সেদিকে চাষিদের খেয়াল রাখতে হবে।’ যদিও চাষিদের দাবি, তেমন কিছুই করা হচ্ছে না। বালাসিপাড়ার এক চাষি শম্ভু দাসের কথায়, ‘এতে পাখির কোনও ক্ষতি হচ্ছে না। নেট দেওয়ায় পাখি আর খেতে বসছে না। আর কোথাও কেউ পাখি ধরার ফাঁদও পাতেনি।’