ভাস্কর শর্মা, ফালাকাটা: এক মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাকে থানায় নিয়ে এসে বিপাকে পড়ল ফালাকাটা থানার পুলিশ (Falakata)। কখনও সে সিভিক ভলান্টিয়ারকে ধরে টানাটানি করছে। আবার কখনও চিৎকার জুড়ে দিচ্ছে। মাঝেমধ্যেই হাতের সামনে যা পাচ্ছে, ছুড়ে মারছে। রবিবার গভীর রাতের ঘটনা। রাত থেকেই থানায় একেবারে হুলুস্থুল কাণ্ড ঘটিয়ে চলছে ওই মহিলা।
সেই মহিলাকে থানায় নিয়ে আসা হল কেন? তাতে কিন্তু রহস্য রয়েছে। সেই মহিলা ও এক টোটোচালককে শহরেরই কলেজপাড়ার এক অনুষ্ঠানবাড়িতে বেঁধে রাখা হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে বাচ্চা চুরির অভিযোগ তোলা হয়েছিল। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। কিন্তু অনুষ্ঠানবাড়িতে আমন্ত্রিত না হয়েও সেখানে ওই দুজন কী করছিল তা নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে।
ফালাকাটা থানার আইসি অভিষেক ভট্টাচার্য বলেন, ‘কলেজপাড়ার একটি অনুষ্ঠানবাড়ি থেকে এক মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলা ও এক মদ্যপ টোটোচালককে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। মহিলা রাত থেকেই গোটা থানা মাথায় তুলে রেখেছে। কোনও লিখিত অভিযোগ না পেলেও অনুষ্ঠানবাড়িতে তারা কী করছিল, সেটা আমরা তদন্ত করে দেখছি।’
এদিকে, যে বাড়িতে অনুষ্ঠান ছিল, তার গৃহকর্তা প্রদীপ সরকার বলেন, ‘রবিবার আমার নাতনির অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠান ছিল। হঠাৎ রাত দেড়টা নাগাদ এক মহিলা ও এক টোটোচালক বাড়িতে ঢুকে যায়। তারা আমার নাতনিকে ধরে টানাটানি করে। পরে সবাই মিলে তাদের বেঁধে রেখে উত্তমমধ্যম দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিই। কিন্তু কেন তারা আমার বাড়িতে এসেছিল, বুঝতে পারছি না।’
রবিবার প্রদীপের বাড়িতে অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে প্যান্ডেল বানানো হয়েছিল। পাড়াপড়শি, আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল। গভীর রাত পর্যন্ত খাওয়াদাওয়া চলে। আমন্ত্রিতরা অনেকেই দেখেছেন, বাড়ির সামনে একটি হাইস্পিড টোটো নিয়ে এক তরুণ দাঁড়িয়ে ছিল। ওই টোটোতেই এক মহিলাও বসে ছিলেন। খাওয়াদাওয়া শেষ করে সবাই যখন গোছগাছ করতে ব্যস্ত, ওই সময় হঠাৎ টোটোচালক এবং মহিলা ঘরে ঢুকে পড়ে। অভিযোগ, ওই মহিলা প্রদীপের নাতনিকে তুলে নিয়ে পালাতে যায়। কিন্তু সবাই দেখে তাদের ধরে ফেলে। খবর দেওয়া হয় থানায়। পুলিশ রাত ২টা নাগাদ এসে ওই মহিলা এবং টোটোচালককে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। প্রদীপের অভিযোগ, তাদের সঙ্গে আরেকজন ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি দেখে সে পালিয়ে যায়।
এদিকে, টোটোচালক এবং মহিলাকে থানায় এনে বিপাকে পড়ে পুলিশ। পুলিশ বুঝতে পারে, ওই মহিলার মানসিক সমস্যা আছে। থানায় আসার পরেই চিৎকার-চ্যাঁচামেচি জুড়ে দেয়। সামনে যাকে পায়, তাকে ধরে মারধর শুরু করে। পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার সকালে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। থানার একটি ঘরে তাকে আটক করে রাখা হয়। সেখানে সবকিছু লন্ডভন্ড করেছে, ভাঙচুর করেছে। এক লেডি ইনস্পেকটর এবং সিভিক ভলান্টিয়ারদের মারধর করেছে। কেন তারা ওই বাড়িতে গিয়েছিল, তা জানতে সেই মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার চেষ্টা করেছে পুলিশ। কিন্তু মহিলা কোনও কথাই বলেনি।
এদিকে, সেই মহিলা ও টোটোচালককে বেঁধে মারধরের ভিডিও সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অনেকেই সেই ভিডিও পোস্ট করে বাচ্চা চুরির অভিযোগ তুলেছে। যদিও ফালাকাটা থানার পুলিশ জানিয়েছে, বাচ্চা চুরির মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি। পুলিশের সংযোজন, যারা বাচ্চা চুরির অপবাদ দিয়ে সেই মহিলার ভিডিও সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।