ফালাকাটা: সম্প্রতি চিলাপাতার মেন্দাবাড়ি জঙ্গলের ভেতরে জ্বালানি সংগ্রহ করতে গিয়ে হাতির হানায় তিন মহিলার মৃত্যু হয়। এর আগেও জ্বালানি সংগ্রহে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনা কম ঘটেনি। তাতেও হুঁশ ফেরেনি। বন দপ্তরের তরফে সচেতনতা প্রচার করা হলেও সেসব তোয়াক্কা না করে চলছে জঙ্গলে প্রবেশ। মঙ্গলবার দুপুরে ফালাকাটার বংশীধরপুর থেকে একদল মহিলা জঙ্গলে ঢোকেন। সবার হাতে জ্বালানি সংগ্রহের সরঞ্জাম। তাঁদের দাবি, পেটের টানেই এই কাজ। তবে গভীর জঙ্গলে তাঁরা প্রবেশ করেন না। বিষয়টি জানার পর দ্রুত পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছে বন দপ্তর।
ফালাকাটা পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ দীপক সরকার বলেন, ‘বন সংলগ্ন গ্রামগুলির বাসিন্দাদের নানাভাবে সচেতন করা হচ্ছে। এখন বুনো হাতির উপদ্রবও যথেষ্ট বেড়েছে। মাঝেমধ্যে লোকালয়ে হাতি ঢুকে পড়ছে। তারপরও কেউ যদি এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জঙ্গলের ভেতরে ঢোকে, তাহলে তো মুশকিল!’ তাঁর সংযোজন, ‘পরে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তো সরকারকে দোষারোপ করা হয়। তাই বিষয়টি এখনই বন দপ্তরকে জানিয়েছি।’
ফালাকাটা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে বংশীধরপুর গ্রামের বুড়িতোর্ষা নদীর পাড় ঘেঁষে মহিলাদের এদিন জঙ্গলে ঢুকতে দেখা যায়। এটি জলদাপাড়ার ব্যাংডাকি বিটের অন্তর্গত। সংশ্লিষ্ট বিট অফিসার অন্বেষণ চক্রবর্তীর কথায়, ‘বংশীধরপুরে হুরকুর হাট, চুলকানির হাটে মাইকিং করে জ্বালানি সংগ্রহে জঙ্গলে ঢুকতে নিষেধ করা হয়েছে। যৌথ বন পরিচালন কমিটির বৈঠকেও এ বিষয়ে গ্রামবাসীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়। অনেক সময় জঙ্গলের ভেতরে কাউকে দেখলে নিয়ম অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হয়।’ জঙ্গলে এখন হাতি, বাইসন আছে বলে জানান তিনি। তাই এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জঙ্গলে ঢোকা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। এদিন যে একদল মহিলা জঙ্গলে ঢুকেছে, খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানালেন বিট অফিসার।
এদিকে, জঙ্গলে ঢোকা মহিলাদের অধিকাংশ আদিবাসী সম্প্রদায়ের। তাঁরা এ নিয়ে অভাবের যুক্তি দেখাচ্ছেন। ভয়ে অবশ্য কেউ নাম বলতে চাননি। এক মহিলার কথায়, ‘একশোদিনের কাজ তো অনেকদিন ধরে বন্ধ। গ্রামে চাষের জমিতেও সবসময় দিনমজুরি জোটে না। তাই মাঝেমধ্যে এভাবে জঙ্গলে গিয়ে কিছু জ্বালানি নিয়ে এসে বিক্রি করি।’ তবে তাঁরা গভীর জঙ্গলে যান না বলেই দাবি। আরেক মহিলার কথায়, ‘আশপাশের এলাকা থেকে গাছের শুকনো ডাল সংগ্রহ করি। হাতির ভয় তো আমাদেরও আছে। তাই গভীর জঙ্গলে যাই না।’ বন দপ্তরের নিয়মের কথা মেনে নিয়ে আরেকজন জানালেন, হাতিও তো মাঝেমধ্যে আমাদের গ্রামে ঢুকে পড়ে। ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়, ফসল নষ্ট হয়। তখন তো পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ মেলে না। তাঁরা তো সেসব মেনে নেন।