ফালাকাটা: শুক্রবার রাতে ময়নাগুড়ির বোলবাড়িতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের দুটি এটিএম থেকে টাকা লুটের ঘটনা ঘটেছে। প্রথমে পুলিশ দুষ্কৃতীদের ধরতে নাকানিচোবানি খায়। যদিও পরে তারা ধরা পড়ে। আর এই ঘটনার পরেই ফালাকাটা শহরের বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএমগুলির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এদিন এটিএমের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আলিপুরদুয়ার লিড ব্যাংক ম্যানেজার লিপিকা রায়কে ফোন করা হয়েছিল। এমনকি মেসেজও করা হয়। কিন্তু তাঁর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ, শহরের বেশিরভাগ এটিএমই তো রক্ষীবিহীন অবস্থায় রয়েছে। যে কোনও সময় এখানেও ময়নাগুড়ির মতো ঘটনা যে ঘটবে না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না পুলিশও। স্বাভাবিকভাবেই শহরের রক্ষীবিহীন এটিএম কাউন্টার নিয়ে চিন্তায় আছে পুলিশও। তবে ফালাকাটা থানার আইসি অভিষেক ভট্টাচার্য বলেন, ‘রক্ষীবিহীন এটিএমগুলি নিয়ে সত্যিই আমরা চিন্তিত। তবে এটিএম সহ শহরের দুষ্কর্ম রুখতে আমরা পদক্ষেপ করছি। পাশাপাশি সোমবার এটিএমগুলির নিরাপত্তা নিয়ে সব ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকও ডাকা হয়েছে।’
ফালাকাটা শহরে রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি ব্যাংক মিলে প্রায় ১৮টি এটিএম আছে। ফালাকাটার হাটখোলা, সুভাষপল্লি, বাবুপাড়া, নেতাজি রোড, ধূপগুড়ি মোড়, দুলালদোকান এলাকায় রয়েছে সেই এটিএমগুলি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দিনেরবেলা কোনও নিরাপত্তারক্ষীর বালাই নেই। আর রাতেও নিরাপত্তারক্ষী থাকেন মাত্র দু’তিনটিতে। ফলে দিন-রাত, ঝড়-বৃষ্টি-শীতের মধ্যেও এটিএমগুলি খোলা অবস্থাতেই থাকে।
নিরাপত্তারক্ষীর কথা বাদ দিলেও নিরাপত্তা নিয়ে আরও কয়েকটি ব্যবস্থা থাকার কথা। যেমন সিসিটিভি ক্যামেরা। শহর ঘুরে দেখা গেল, এটিএমগুলি ও সংলগ্ন এলাকায় পর্যন্ত সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। এমনকি এটিএমগুলির বাইরে রাতে পর্যাপ্ত আলোও থাকে না। যদিও ফালাকাটার বাসিন্দারা বলছেন, অতীতে কিন্তু এমন অবস্থা ছিল না। একটা সময়ে প্রায় প্রতিটি এটিএমে নিরাপত্তারক্ষী বহাল করা হয়েছিল। বেশ কয়েক বছর ধরে তা উধাও। কেন সরানো হল নিরাপত্তারক্ষীদের? বিভিন্ন ব্যাংকের তরফে জানানো হয়েছে, এটিএমে টাকা তুলতে এসে গ্রাহকরা দুষ্কৃতীদের পাল্লায় পড়তেন। বিশেষ করে মহিলারা। সেই ঘটনা রুখতেই তখন নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছিল। পরে শহরে এমন ঘটনা কমে যায়। তাই অধিকাংশ এটিএম থেকে নিরাপত্তারক্ষী তুলে নেওয়া হয়। যা নিয়ে এখন ক্ষোভ ও উদ্বেগ বাড়ছে শহরের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
ফালাকাটা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নান্টু তালুকদার বলেন, ‘শহরের বেশিরভাগ এটিএম অসুরক্ষিত। সব এটিএমই মূলত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির আশপাশে অবস্থিত। এতে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাও জড়িত। তাই ব্যাংক কর্তৃপক্ষের উচিত এটিএমগুলিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষী রাখা।’
ব্যাংকগুলির নামে এটিএম চললেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন বেসরকারি এজেন্সিকে এটিএম চালানোর দায়িত্ব দিয়ে দেয়। তাই এটিএমের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখে এজেন্সিরাই। বিভিন্ন ব্যাংক সূত্রে খবর, এজেন্সিগুলি যে পরিমাণ টাকা এটিএমে ভরে তার একটা বিমা করা থাকে। ফলে টাকা লুট হলে তা বিমা সংস্থার কাছ থেকে এজেন্সিগুলি ফেরত পেয়ে যায়। পুলিশের বক্তব্য, বিমা থাকার কারণেই এজেন্সিগুলি এটিএমে রক্ষী রাখার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেয় না।
শহরের নাগরিক মঞ্চের আহ্বায়ক বাপন গোপ বলেন, ‘রাতবিরেতে অনেকে এটিএমগুলিতে টাকা তুলতে গিয়েও তো দুষ্কৃতীর খপ্পরে পড়তে পারেন। এতে শহরের নিরাপত্তা জড়িত। তাই এটিএমগুলিতে নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েনের দাবিতে আমরা ব্যাংক এবং পুলিশকে ডেপুটেশন দেব।’