ফালাকাটা: নেশা নাকি, পেশা। পেটের টান অনেকসময়ই জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। আর জীবন সংগ্রাম যে কতটা কঠিন তা বোঝা যায় ৩৪ বছরের সুব্রত সন্ন্যাসীকে দেখলে। পেটের টানে রুপোলি পর্দায় অভিনয় ছেড়েছেন তিনি। এখন ফালাকাটার ফুটপাথে হাতে টানা গাড়িতে করে বেরিয়ে পড়েন বিরিয়ানি বিক্রি করতে। সুব্রতর কথায়, ‘অভিনয়টা আমার রক্তে। তাই পেটের টানে বিরিয়ানির দোকান করেও থিয়েটারটা চালিয়ে যেতে চাই। তবে জানি না কতদিন এভাবে চলবে।’
৭-৮ বছর আগে ফালাকাটার সুব্রত কলকাতার একটি থিয়েটারের দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পাশাপাশি একটি সিরিয়াল তৈরির দলের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। মাঝেমধ্যে অভিনয় করার সুযোগও পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু করোনা অনেকের মতো তাঁর জীবনের মোড়ও ঘুরিয়ে দেয়। কলকাতায় কাজ না পেয়ে তিনি সোজা চলে আসেন ফালাকাটার রামকৃষ্ণ স্মরণীর বাড়িতে। মা-বাবাকে নিয়ে সংসার চালাবেন কী করে? তাই শেষে ইউটিউব থেকে দেখে বিরিয়ানি বানিয়ে ডেলিভারি করার পরিকল্পনা নেন। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। ওই সময় আনুমানিক ১ বছর ধরে বিরিয়ানি বানিয়ে হোম ডেলিভারি করতে লাগলেন। বিরিয়ানির ব্যবসায় ভালো আয়ও হল।
জমানো টাকা নিয়ে সুব্রত আবার বেরিয়ে পড়লেন তাঁর স্বপ্নের উদ্দেশ্যে। অভিনয়ের জগতে আবার ফিরতে চাইলেন তিনি। আবার গেলেন কলকাতায়। কলকাতায় গিয়েই সুব্রত পূর্বরঙ্গ নামে একটি থিয়েটারের দলে ঢুকে পড়েন। এমনকি অভিনয় করার সুযোগের পাশাপাশি পারিশ্রমিকও পেতে থাকেন। শুরু হয় তাঁর সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তুতি। দুটি বাংলা সিরিয়াল এবং ১টি বাংলা সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগও তৈরি হয়। তবে ভাগ্য সবসময় সাধ দেয়নি। আর কাজ পাচ্ছিলেন না সুব্রত।
আর তার মাঝেই কলকাতা ছেড়ে অভিনয়ের জন্য তিনি চলে আসেন ফালাকাটায়। এখান থেকে স্থানীয় পরিচালকদের মাধ্যমে ‘মানসাই’ নামের একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবিতে অভিনয় করেন। অবশেষে, ‘তোর অপেক্ষায়’-এর মতো জনপ্রিয় সিনেমাতেও পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন। পাশাপাশি চালিয়ে যেতে থাকেন ইউটিউবও। অভিনয় করলেও পাচ্ছিলেন না পারিশ্রমিক। তাই উপায় না পেয়ে সুব্রত এখন ধূপগুড়ি মোড়ে বিরিয়ানির দোকান চালাচ্ছেন।
বিরিয়ানির দোকান শেষ করে এখন নাটক, নাচ, গানে অভিনয় করছেন। ওই সংস্থার কর্ণধার অঙ্কুর বিশ্বাসের কথায়, ‘সুব্রত একজন দক্ষ অভিনেতা। কিছু কারণে তিনি হয়তো সিনেমার অভিনয়টা ছেড়ে দিয়েছেন। তবে আমি ওঁকে অভিনয়টা চালিয়ে যেতে বলেছি। তাই আমার থিয়েটার গ্রুপের সঙ্গেই ওঁকে যুক্ত করেছি।’ অন্যদিকে, ধূপগুড়ি মোড়ে এখন বিশেষ করে ইয়াং জেনারেশন সুব্রতর বিরিয়ানিতে মজেছে।