ফালাকাটা: সরকারি শৌচাগারের গর্ত খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে এল বিশালাকার কুয়োর ধ্বংসাবশেষ। যা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়াল ফালাকাটা শহরে। শুক্রবার সেই কুয়োর ধ্বংসাবশেষ দেখতে রীতিমতো ভিড় জমে যায়। কুয়োটি অনেক পুরোনো ভেবে গর্ত খোঁড়ার কাজ আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়। কুয়োর ইতিহাস জানতে এলাকার কাউন্সিলার ইতিমধ্যেই শহরের প্রবীণ বাসিন্দাদের শরণাপন্ন হয়েছেন।
পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার অভিজিৎ রায় বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডের পোস্ট অফিসে মাঠের সামনে একটি পাবলিক টয়লেট করা হচ্ছে। এজন্য গর্ত খোঁড়া শুরু হয়। অনেকটা খুঁড়তেই একটি পুরোনো কুয়োর ধ্বংসাবশেষ বের হয়। সঙ্গে সঙ্গে আমরা গর্ত খোঁড়ার কাজ বন্ধ করে দিই। কুয়োটির ইতিহাস জানতে শহরের প্রবীণ বাসিন্দাদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। শনিবার পুলিশের উপস্থিতিতে গর্ত খোঁড়া হবে।’
এদিন পোস্ট অফিস মাঠের সামনে গিয়ে দেখা গেল শৌচাগার করার জন্য বেশ কয়েকটি গর্ত খোঁড়া হচ্ছিল। তার মধ্যেই একটি গর্ত কয়েক মিটার খুঁড়তেই কুয়োর ধ্বংসাবশেষ বেরিয়ে আসে। ইট ও চুনসুরকি দিয়ে তৈরি করা ওই কুয়োটির বিভিন্ন অংশ ভেঙে রয়েছে। তবে উপর থেকে দেখলে এখনও স্পষ্ট বোঝা যায় কুয়োটির আকার।
পুরসভার তরফে জানা গিয়েছে, শনিবার কুয়োটি ফের খোঁড়া হবে, তবে পুলিশের উপস্থিতিতেই। জানা গিয়েছে, ফালাকাটার পোস্ট অফিসটিও অনেক পুরোনো। এখানে যাঁরা চাকরি করতেন তাঁরা কোয়ার্টারে বসবাস করতেন। এখনও কোয়ার্টারের ভেতর দু’একটি কুয়ো আছে। এদিন মাটির নীচে দেখা কুয়োর ধ্বংসাবশেষ পোস্ট অফিসের কর্মীরা ব্যবহার করতেন কি না তা জানার চেষ্টা চলছে। আবার অনেকে মনে করছেন এই এলাকায় একটা সময় হস্টেল ছিল। সম্ভবত হস্টেলে পানীয় জলের জন্যই কুয়োটি খোঁড়া হয়েছিল। পাশাপাশি এই এলাকাটি একটি সময় ঝোপজঙ্গলে ভর্তি ছিল। ফালাকাটায় একটা সময় ব্রিটিশদের রাজত্বও ছিল। তাই কুয়োটি ব্রিটিশ আমলেও তৈরি করা হতে পারে বলে প্রাথমিক অনুমান করা হচ্ছে। যদিও বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আগে এমন কুয়োর মধ্যে মানুষ খুন করেও লুকিয়ে রাখা হত। কুয়োতে ফেলে গণহত্যাও করা হত। পুরোনো ইট, চুনসুরকি দিয়ে বানানো এমন কুয়োর গুরুত্ব তাই অনেক। স্বাভাবিকভাবেই কুয়োর ধ্বংসাবশেষ নিয়ে এখন তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে ফালাকাটায়।
ফালাকাটা শহরের প্রবীণ বাসিন্দা তথা বিশিষ্ট নাট্য সংগঠক দিলীপ সরকার বলেন, ‘ফালাকাটা শহরের বিভিন্ন জায়গায় আগে বড় বড় কয়েকটি কুয়ো ছিল। সেগুলি মূলত সাধারণ মানুষের স্নানের জন্যই ব্যবহার করা হত। তবে এই কুয়োর বিষয়ে এখনও কিছু স্পষ্ট নয়।’
ফালাকাটার ইতিহাসপ্রেমী সঞ্জয় কুণ্ডুর কথায়, ‘পোড়া ইট, চুনসুরকির কাজ মূলত ব্রিটিশ স্থাপত্যের নিদর্শন বহন করে। আমাদের এলাকাতেও ব্রিটিশ স্থাপত্যের নিদর্শন মেলে। পোস্ট অফিসের মাঠের কুয়োটিও একই সময়ের কি না তা বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাবে।’